কমে আসছে রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশি ত্রাণ
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশি ত্রাণ-সহায়তা কমে আসছে। জাতিসংঘসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখলেও পুরো ব্যবস্থাপনাটি করতে হচ্ছে সরকারকেই। সরকারি, বেসরকারি সংগঠন ও ব্যক্তি-পর্যায় থেকে পাওয়া ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক’দের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা ও আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে দেশি-বিদেশি ত্রাণ সামগ্রীর একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২০ লাখ টাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৩০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া ৫০ লাখ টাকা এবং ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল ইতোমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে।
তুরস্ক থেকে ৩৪ দশমিক ৯৬ মেট্রিক টন চাল, ৫ দশমিক ৯৭৪ মেট্রিক টন ডাল, ৫ হাজার ৮৯৬ লিটার তেল, ২ মেট্রিক টন লবণ ও ৬ দশমিক ৩৭২ মেট্রিক টন চিনি ত্রাণ হিসেবে পাওয়া গেছে। এর সবই রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন ৬ হাজার জনের জন্য ভাত, ডাল ও মাংস দিয়ে এক বেলা রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে তুরস্কের পক্ষ থেকে।
ইন্দোনেশিয়ার পক্ষ থেকে ২ হাজার ২৯ দশমিক ৯৮ মেট্রিক টন চাল, এক হাজার মেট্রিক টন চিনি, ১৩ হাজার ৭০০ পিস কম্বল ও ১০০ পিস তাঁবু ত্রাণ হিসেবে পাওয়া যায়। এরমধ্যে এক হাজার ৯৪৮ দশমিক ৯৮ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে।
মরক্কোর পক্ষ থেকে ৮ হাজার দশমিক ৯৮০ মেট্রিক টন চাল, এক হাজার পিস কম্বল, চার হাজার ৩২০ কেজি দুধ, ২০ কার্টন ওষুধ ত্রাণ হিসেবে পাওয়া গেছে। যার মধ্যে চাল ও দুধ এখনও মজুদ রয়েছে।
আজারবাইজানের পক্ষ থেকে ত্রাণ হিসেবে পাওয়া গেছে ২০ হাজার লিটার তেল, ২০ হাজার মেট্রিক টন চিনি ও ১০ হাজার কেজি দুধ। ইতোমধ্যেই এসব ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
মালেয়েশিয়ার পক্ষ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল, দুই হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন ডাল, তিন হাজার ৪৭৪ লিটার তেল, দুই হাজার ১২৫ মেট্রিক টন লবণ, এক হাজার ২২৭ মেট্রিক টন চিনি, ৩০৯ ব্যাগ কম্বল ও ৬৮৫ পিস তাঁবু ত্রাণ হিসেবে পাওয়া গেছে। এরমধ্যে কম্বল ও তাঁবু বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ত্রাণ এখনও মজুদ রয়েছে।
ভারত থেকে ত্রাণ হিসেবে ২৭৮ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন চাল, ৫৫ দশমিক ৭৮৪ মেট্রিক টন ডাল, ৬২ হাজার ৯৪০ লিটার তেল, ৫৫ দশমিক ৭৮৪ মেট্রিক টন লবণ, ৫৫ দশমিক ৭৮৪ মেট্রিক টন চিনি, ৫৫ দশমিক ৭৮৪ কেজি দুধ পাওয়া গেছে। যার সবই এরইমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুর থেকে ত্রাণ হিসেবে পাওয়া গেছে ২৪ ব্যাগ কম্বল, ৯০ পিস তাবু ও ৬৪ কার্টন ওষুধ। যার সবই এরইমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ইরান থেকে পাওয়া গেছে ৪৬৫ ব্যাগ কম্বল, ৩০০ পিস তাঁবু, ১৩৯ কার্টন ওষুধ। এগুলো বিতরণ করা হয়েছে।
ইতালি থেকে পাওয়া গেছে ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল, তিন দশমিক ১২৫ মেট্রিক টন ডাল, তিন হাজার ৬০০ লিটার তেল, দুই দশমিক ৫০০ মেট্রিক টন লবণ, এক দশমিক ৮৭৫ মেট্রিক টন চিনি, ৫৪ কার্টন ওষুধ। এরমধ্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ত্রাণগুলো মজুদ রয়েছে। দুবাই থেকে পাওয়া গেছে ২৬ দশমিক ৫০০ মেট্রিক টন খেজুর। এগুলো ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
সৌদি আরবের পক্ষ থেকে যেসব ত্রাণ পাওয়া গেছে সেগুলো হচ্ছে, কম্বল ৮৫০ কার্টন, মেট্রেস ২৮৪ কার্টন, তাঁবু ৫৫০ পিস, ফুড বাস্কেট ১০০ কার্টন, ময়দা ১০০ ব্যাগ ও চাল ১০০ ব্যাগ। কম্বল ছাড়া বাকিগুলো এখনও মজুদ রয়েছে।
কানাডার পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে কম্বল ও পোশাক ২০০ বক্স, উইন্টার কটস ব্লাঙ্কেট ৩৪০ বক্স, ব্লাঙ্কেটস এক হাজার ২০০ পিস, অরেঞ্জ আইটেম ১০০ ব্যাগ, টমেটো সস এক হাজার ২০০ পিস, পেস্তা এক হাজার ৫০০ কেজি ও চাল ছয় হাজার ৫০০ কেজি। কানাডার ত্রাণ মজুদ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া ত্রাণ সামগ্রী প্রথমে কক্সবাজারের ঝিলংজা খাদ্য গুদামে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ত্রাণ সামগ্রীর ধরণ ও বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের চাহিদা বিবেচনা করে খাদ্য গুদাম থেকে ত্রাণ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। প্রতিদিন সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি, সংস্থা থেকে ট্রাকেযোগে পাওয়া ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকায় এসব ত্রাণ সামগ্রীর অধিকাংশ খাদ্য গুদামে বর্তমানে সংরক্ষিত আছে।
অন্যদিকে, ১০৮টি এনজিওর কাছ থেকে ৫৩৬ কোটি ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৭৭৩ টাকা পাওয়া গেছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরাসরি সড়কপথে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও সংগঠন থেকে প্রাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী উখিয়া উপজেলায় স্থাপিত ত্রাণ নিয়ন্ত্রণকক্ষে রেজিস্টারভুক্ত করা হয়। এরপর প্রাপ্ত ত্রাণ সামগ্রীর পরিমাণ ও ধরন নির্ধারণ করে চাহিদা অনুযায়ী ১৪টি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
এছাড়া ‘মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহায়তা’ নামে স্থানীয় সোনালী ব্যাংকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বর্তমানে জমা রয়েছে চার কোটি ৮১ লাখ ৭৩ হাজার ৭২২ টাকা।
কক্সবাজার জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কেবিএম জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রথম দিকে যেভাবে দেশি-বিদেশি ত্রাণ সহায়তা পাওয়া গেছে, এখন সে ত্রাণ-সহায়তা অনেক কমে এসেছে। জাতিসংঘসহ কয়েকটি সংস্থা তাদের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখলেও বিশ্ব খাদ্য সংস্থা এই মাস (ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে এ চাপ সরকারকেই বইতে হবে।’
চলমান ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমকে আরও সুশৃঙ্খল ও গতিশীল করার লক্ষ্যে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিয়ানমার নাগরিকদের প্রতিটি পরিবারকে একটি করে ত্রাণ বিতরণ কার্ড দেওয়া হয়েছে। এর আগেই ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ১৫ জন উপসচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার অফিস থেকে ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩০ জন কর্মচারী সংযুক্ত করা হয়। ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ত্রাণ নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ ১৪টি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গত ৩১ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগকৃত সব উপসচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে বিভাগীয় কমিশনার অফিস থেকে নিয়োগ দেওয়া ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ২১ জন কর্মচারী, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। -প্রতিবেদন বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে প্রকাশিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন