করোনায় ঢালিউডে ভরাডুবি, অপেক্ষা সুদিনের

ঢাকাই সিনেমার পুনর্গঠনের বছর ছিল ২০১৯। বিভিন্ন সমিতির নির্বাচন শেষে জয়ী কমিটি ২০২০ সাল থেকে পুরোদমে কাজের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু করোনা অশনি সংকেত হয়ে হাজির হওয়ায় থমকে গিয়েছিল চিত্রাঙ্গনও। ঘুরে দাঁড়ানোর বছরে আছড়ে পড়ল বাংলা সিনেমা। তবুও আশাবাদী সিনেপাড়ার বাসিন্দারা।

সবচেয়ে কম সিনেমা মুক্তি: স্বাধীনতার পর সবচেয়ে কম সিনেমা মুক্তি পেয়েছে ২০২০ সালে। পুরো বছরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে মাত্র ১৬টি সিনেমা। যার মধ্যে ২টি ছিল আমদানি এবং ১টি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা। ২০১৯ সালে বছর জুড়ে মুক্তি পেয়েছিল ৫৪টি সিনেমা। যার মধ্যে ১০টি আমদানি এবং ২টি ছিল যৌথ প্রযোজনার।

মানহীন সিনেমা দিয়ে বছর শুরু-শেষ: বছরের শুরুটাই ভালো হয়নি ঢালিউডের। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছিল ‘জয়নগরের জমিদার’ সিনেমাটি। মানহীন সিনেমা দিয়ে বছর শুরু হওয়ায় বিষয়টিকে ‘বিসমিল্লায় গলদ’ বলছেন সিনেপাড়ার অনেকে। নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে ‘সাহসী হিরো আলম’ মুক্তির মাধ্যমে খোলে দেশের অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহ। আর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে ‘তুই আমার রাজা আমি তোর রাণী’। হলে দর্শক টানা তো দূরের কথা, মানহীন এসব সিনেমা দেখতে যায়নি কলাকুশলীদের অনেকেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল সমালোচনার শিকার হয়েছে মানহীন সিনেমাগুলো।

দর্শক টানতে পারেননি শাকিব খান: বাংলা সিনেমায় শাকিব খান মানে দর্শকদের ভিন্ন উচ্ছ্বাস, প্রযোজক-হল মালিকদের চোখে মুখে স্বস্তি। এ বছর শাকিব খানের তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। দুটি প্রেক্ষাগৃহে এবং একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও খুব সাফল্য পায়নি ‘বীর’ ও ‘শাহেনশাহ’ সিনেমা দুটি। মুক্তির প্রথম দুদিন কিছু হল দর্শকপূর্ণ থাকলেও গোটা সপ্তাহে প্রায় ফাঁকা গেছে অধিকাংশ হল।

থুবড়ে পড়েছে বাণিজ্যিক সিনেমা: বাণিজ্যিক ঘরানার একাধিক সিনেমা মুক্তি পেলেও ব্যবসায়িক সফলতা পায়নি এগুলো। ‘বীর’, ‘শাহেনশাহ’, ‘বিশ্বসুন্দরী’, ‘হৃদয় জুড়ে’ সিনেমার সফলতার চিত্র প্রায় একই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হয়েছে সিনেমাগুলো নিয়ে। কিন্তু ব্যবসায়িক সফলতা শূন্য। নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে বড় বাজেটের সিনেমা মুক্তি দেওয়ার সাহস করায় ‘বিশ্বসুন্দরী’ টিমকে ধন্যবাদ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু হল মালিকেরা এ সিনেমাকে ‘মন্দের ভালো’ আখ্যা দিয়েছেন।

আলোচনা বিষয়ভিত্তিক সিনেমা: বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমা মুখ থুবড়ে পড়লেও আলোচনায় ছিল বিষয়ভিত্তিক সিনেমা। ‘গণ্ডি’, ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমা দুটি শুধুমাত্র সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেলেও হাইপ তুলেছিল অনলাইন অফলাইনেও। যদিও লগ্নি কতটুকু তুলতে পেরেছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে। তবে, আলোচনাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বিষয়ভিত্তিক বা বিকল্পধারা নির্মাতা। ধীরে ধীরে এ ধারায় সফলতা আসবে বলে আশা করেন একাধিক নির্মাতা।

এফডিসিতে কোন্দল: বছরজুড়ে সিনেমা নির্মাণ না হলেও আলোচনায় ছিল চলচ্চিত্রের আঁতুর ঘর এফডিসি। নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ খেলায় মেতে উঠেছিলেন সমিতির নেতারা। ব্যক্তি স্বার্থে চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করার অভিযোগে জায়েদ খানকে ‘সকল কর্মকাণ্ড থেকে বয়কট’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠন। পাশাপাশি মিশা সওদাগরকেও ‘বয়কট’ করা হয়েছিল। বছরের শেষ দিকে জায়েদ খানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রযোজক সমিতির কমিটি বাতিল করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে হিরো আলম-জায়েদ খান দ্বন্দ্ব, বঞ্চিত শিল্পীদের পদ ফিরিয়ে দেওয়া, করোনায় দুস্থ শিল্পীদের সহায়তার কারণেও আলোচনায় ছিল এফডিসি।

সুদিনের অপেক্ষা: সবকিছুর পরেও সুদিনের অপেক্ষায় ফিল্মপাড়ার বাসিন্দারা। পরিচালক-পরিবেশক এবং হল মালিকের আশা করছেন, নতুন করে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে ঢাকাই সিনেমা। নতুন অনেকগুলো সিনেমার কাজ শুরু হয়েছে। অপেক্ষায় আছে বিগ বাজেটে একাধিক সিনেমার মুক্তি। শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, পরীমনি, সিয়াম, রোশান, তাহসান, বাপ্পি, মীম, নুসরাত ফারিয়ার অভিনীত প্রায় ডজনখানেক সিনেমা রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। এছাড়া আঁচল, মাহি, সাইমন সাদিক, দীঘি অভিনয় করছেন একাধিক নতুন সিনেমায়।