মতামত

কলারোয়ার আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ: উন্নয়নের সংযুক্তি পথ

কলারোয়ার আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ: উন্নয়নের সংযুক্তি পথ

মো. আশরাফুজ্জামান

নব্বইয়ের দশকে জন্ম যাদের তারা কলারোয়ার ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখেছেন। খুব ছোট বেলায় দেখেছি, যে বেত্রাবতীর পাড়ে কলারোয়ার জন্ম তাতে সাগরের নোনা জল ঢেউ খেলত, নিয়মিত জোয়ার ভাটা আর নৌকার সারি এখনও চোখে ভাসে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এসব উপকথার মত মনে হতে পারে কিন্তু নতুন প্রজন্ম এটা জানেই না কিভাবে বেত্রাবতী তার পাড়ের লোকজনের জীবিকা নির্বাহ করত! সময়ের আবর্তে আজ বেত্রাবতী মৃত প্রায়। পাঠক হয়তোবা ভাবছেন, সড়কের কথা লিখতে গিয়ে নদী কেন টেনে আনলাম?

কলারোয়া, মুঘল ও ব্রিটিশ আমলে প্রশাসন কেন্দ্র হিসেবে নাম ডাক ছিল। ঢাকা, মুর্শিদাবাদ ও কলকাতা দেশের রাজধানী থাকাকালীন কলারোয়া ছিল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। মুঘল সুবেদারী আমলে ঢাকা যখন বাঙ্গালার রাজধানী (১৬০৮-১৭০৪ সাল) ছিল, তখন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সেনা বাহিনীর হেড কোয়ার্টার ছিল ঈশ্বরীপুরে (বর্তমানে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে অবস্থিত)। সম্রাট শাহজাহানের আমলে সেটি স্থানান্তর করে যশোরের কেশবপুরের ত্রিমোহনীর নিকটে মির্জানগরে নেওয়া হয়, যেখানে আজও সেসবের নিদর্শন টিকে আছে। সেই সময় হতে কেশবপুর থেকে কলারোয়া (তৎকালীন হোসেইনপুর) হয়ে মেদিনীপুর, হুগলী ও বর্ধমান অঞ্চলে নিরাপত্তা দেওয়া হত।

সম্রাট আওরঙ্গজেবের শেষ সময়ে ১৬৯২-১৬৯৬ সালের এর মধ্যে বর্তমান পশ্চিম বাংলার বর্ধমানে শুভা সিংহ নামে একজন সামন্ত বিদ্রোহ করেন, তার বিদ্রোহ দমনের জন্য তৎকালীন ঢাকার সুবেদার ইব্রাহিম খান মির্জানগরের ফৌজদার নুরুল্লাহকে দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি সম্ভবত তার সেনা বাহিনী নিয়ে কলারোয়া হয়ে হুগলিতে যান কিন্তু তিনি যুদ্ধে পরাজয়ের ভয়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকে কেশবপুরের মির্জানগরের প্রভাব কমতে থাকে, বর্তমানে সেটি একটি সাধারণ গ্রাম।

এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একসময় কলারোয়ার সাথে কেশবপুরের যোগাযোগের বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য।ব্রিটিশ আমলে যশোর থেকে স্বল্প সময়ে কলকাতা পৌছানোর অন্যতম রুট ছিল এটি। আমরা যখন ছোট তখন দেখতাম সরসকাটি থেকে চন্দনপুর বাস চলাচল হতো। কিন্তু বেত্রেবতীর জোয়ার ভাটার মত এই সড়কও প্রাণ হারায়। পত্রিকা মারফত জানা যায় এটি মানুষের জন্য নাকি মরণ ফাঁদ হয়ে উঠেছে। এর জন্য কে বা কারা দায়ী সে বিবেচনায় না গিয়ে আমরা বরং নতুন সম্ভাবনার কথা বলি।

বাংলাদেশ এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহা সড়কে অবস্থান করছে। দেশের সড়ক ও রেলপথের যোগোযোগ এখন ঢাকা মুখি। দেশের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থান হওয়ায় আমাদের যোগাযোগ খুলনা-যশোর নির্ভর। কলারোয়ার মানুষকে যদি এই দুই রুটে যেতে হয় তাহলে সাতক্ষীরা সদর অথবা নাভারণ-ঝিকরগাছা হয়ে যেতে হয়। দেশের অন্যতম বড় প্রকল্প ভাঙা-যশোর-খুলনা রেল নেটওয়ার্কে আমরা সংযুক্ত নই। আমাদের জেলায় রেলপথ নির্মাণের সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে, বর্তমান মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব ফিরোজ আহমেদ জাতীয় সংসদে এই বিষয়টি উত্থাপন করেন, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয় আর্থিক সংস্থান সাপেক্ষে এটির বাস্তবায়ন নির্ভর করবে।

কলারোয়ার জনগণ কী চিরদিন এইভাবে দেশের উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে থাকবে? দেশের সব জায়গায় যে উন্নয়ন হয়েছে, অজ্ঞাত কারণে কলারোয়া তার থেকে পিছিয়ে রয়েছে। সেই উন্নয়নের ধারায় নিজেদের কে সংযুক্ত করতে কলারোয়া-কেশবপুরের আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন জরুরি, যেখান থেকে খুব সহজে যশোর বা খুলনা উভয়ই দিকেই যাওয়া সম্ভব। দেশের উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আমাদের দূরদর্শী নেতৃবৃন্দ উদারচিত্তে জনকল্যাণে নিজেদেরকে উদ্ভাসিত করবেন, কলারোয়ার জনগণ এমনটাই প্রত্যাশা করেন। তারা প্রত্যাশা করেন, আগামী প্রজন্মের জন্য, স্মার্ট কলারোয়া উপহার দেওয়ার জন্য এবং উন্নয়নের ধারায় নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে তাদের পাশে কেউ ঢাল হয়ে থাকবেন।

লেখক:

মো. আশরাফুজ্জামান
প্রভাষক,
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
যশোর সরকারি মহিলা কলেজ, যশোর।