কাজী শফিকুর : আতর ব্যবসায়ী থেকে বিমানের কারবারি
প্রথমবারের মতো শরিয়াহ এয়ারলাইন্স চালু হতে যাচ্ছে ব্রিটেনে। আর এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন ৩২ বছর বয়সী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা কাজী শফিকুর রহমান; যিনি মাত্র ৬শ ডলার দিয়ে ব্রিটেনে আতর ব্যবসার মাধ্যমে নিজের উদ্যোক্তা-জীবন শুরু করেন।
আর এখন ব্রিটেনে শরিয়াহ এয়ারলাইন্স চালুর যে উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন তার জন্য ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোর নজর কেড়েছেন তিনি। এই এয়ারলাইন্সে কোনো অ্যালকোহল পরিবেশন করা হবে না, ইসলামি বিধি মেনে খাবার দেয়া হবে। এ ছাড়া কেবিন ক্রুদের পোশাকের বিষয়েও এখানে থাকবে কড়াকড়ি। আপাতত যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রুটে উড়বে শুধু শফিকুর প্রতিষ্ঠিত ‘ফিরনাস এয়ারওয়েজের’ বিমান।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান শফিকুর। একটি মাত্র জিএসসিই নিয়েই স্কুল ছাড়েন তিনি। এরপর পকেটে ৬শ ডলার নিয়ে আতর আমদানি করে আতরের ব্যবসা শুরু করেন।
এর আগে পূর্ব লন্ডনে বেড়ে ওঠা শফিকুরকে সেখানকার একটি বিমানবন্দরে পরিচ্ছনতাকর্মীর কাজও করতে হয়েছে।
আর এখন তাকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র পর্যন্ত প্রচারিত হচ্ছে। সম্প্রতি চ্যানেল ফোর নামে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ‘হাউ টু স্টার্ট অ্যান এয়ারলাইন’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচারিত হয়েছে তাকে নিয়ে।
লন্ডনের এই মুসলিম বলেন, আমি একজন ব্রিটেনের নাগরিক। কিন্তু যখন নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশি করা হয়, তখন মনে হয় যেন আপনি বড় কোনো ভুল করে ফেলেছেন। সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। যদি আমরা ধর্মীয় সংস্কৃতিকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে, তাহলে এটা হবে ‘গেম চেঞ্জার।’
বিশ্বের প্রথম শরিয়াহভিত্তিক এয়ারলাইন রায়ানি এয়ারলাইন্স; যা মালয়েশিয়া প্রথম চালু করে। এয়ারলাইনসটি কঠিনভাবে শরিয়াহ নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতো। প্রত্যেক ফ্লাইটের শুরুতে করা হতো বিশেষ মোনাজাত। এ ছাড়া কঠিনভাবে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ ছিল। বিমান পরিচালন বিধির লঙ্ঘনের দায়ে ২০১৬ সালে এই এয়ারলাইন্সটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক এতিহাদ ও এমিরাত এয়ারলাইন্সেও অ্যালকোহল পানের অনুমতি রয়েছে। অথচ এই আরব আমিরাতেই প্রকাশ্যে মদ্যপান অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
২০১৭ সালে সেরা ব্রিটিশ মুসলিম উদ্যোক্তা পদক ঘরে তোলেন শফিকুর। শফিকুররা যখন বাংলাদেশে ছিলেন তখন বাবা-মা, দুই বোন, পাঁচ ভাই নিয়ে তাদের মাত্র তিন বেডরুমের একটি বাসায় থাকতে হতো।
এরপর লন্ডনে পাড়ি দিয়ে স্টিফেনি গ্রিন স্কুলে ভর্তি হন তিনি। ২০০০ সালে স্কুল ছেড়ে দেন। সেই আতর একটি মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে বিক্রি শুরু করেন শফিকুর। যতদিন গেছে শফিকুরদের ওই ব্যবসা কেবল বড়ই হয়েছে। এরপর ২০০৯ সালে তারা প্রতিষ্ঠা করেন সুন্নামাস্ক, পাঁচটি দোকান দেন।
শফিকুরের ভাই কাজী আবিদুর রহমান সুন্নামাস্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তিনি বলেছেন, তাদের বিরোধিতা করার প্রচুর মানুষ যেমন রয়েছে তেমনি সমর্থকও রয়েছে।
ফিরনাস ব্যর্থ হলে তা তাদের পরিবারের জন্য মানহানির কারণ হবে বলেও মনে করেন তিনি। তার ভাষায়, তাদের জন্য সম্মানটাই সব।
শফিকুর ছেলেবেলায় থেকেই বিমান নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন, তার আগ্রহের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল এই বিমান। তিনি বলেন, বিমান দেখলে আমার খুব ভালো লাগে। আমি যখন জীবনে প্রথমবার বিমান দেখলাম তখনই বুঝে গিয়েছিলাম এই জিনিসটার প্রতি আমার আগ্রহ কতটা।
শফিকুর রহমান নিজেকে ভার্জিনিয়া গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্র্যানসনের মতো ভাবছেন, তবে নিজেকে তিনি শুধু রিচার্ড ব্র্যানসন না বলে ‘হালাল রিচার্ড ব্র্যানসন’ বলছেন।
আর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে ফিরনাস এয়ারওয়েজের বিমান। আর তার পরের দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এই এয়ারওয়েজের রুট আরও বিস্তৃত করতে বদ্ধপরিকর শফিকুর।
সূত্র: ডেইলি মেইল
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন