কাদেরের হার্ট অ্যাটাক হয় হাসপাতালেই : ডা. কনক কান্তি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হার্ট অ্যাটাক হয়। এমন তথ্য নিশ্চিত করে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৭২ ঘণ্টা পার না হলে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কিছুই বলা যাবে না।

আজ রোববার সকালে ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ব্রিফ করতে গিয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে ওবায়দুল কাদের প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তাৎক্ষণিক তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। পরে এনজিওগ্রাম করে দেখা যায়, তাঁর হার্টে তিনটি ব্লক। একটিতে স্টেন্টিং করে দেয়া হয়েছে।

ওবায়দুল কাদেরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে জানিয়ে বিএসএমএমইউর উপাচার্য বলেন, আপাতত ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা স্থিতিশীল। তবে তিনি ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকবেন।

এ সময় বিএসএমএমইউর প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কার্ডিওলজির প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তিনি শঙ্কামুক্ত নন। ৭২ ঘণ্টা পর এ ব্যাপারে বলা যাবে।

ওবায়দুল কাদেরের হার্টে রিং পড়ানোর বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেন, তার এনজিওগ্রাম করা হয়েছে। তাঁর হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়।

হাসপাতালটির কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসান এনজিওগ্রামের প্রতিবেদন দেখে বলেন, সেতুমন্ত্রীর এনজিওগ্রাম করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়েছে। এর মধ্যে একটি ওপেন করা হয়েছে। সকালের চেয়েও এখন শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে তার শারীরিক অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন, ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছুই বলা যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছেন। চিকিৎসকের ক্লিয়ারেন্স ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলে ওবায়দুল কাদেরকে দেশের বাইরে নেয়া হবে। তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হতে পারে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ওবায়দুল কাদেরের ভাতিজা তমাল জানান, বিকালের মধ্যে ওবায়দুল কাদেরকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেয়া হবে। সেই প্রস্তুতি চলছে। ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তমাল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সিসিইউতে ওবায়দুল কাদেরের পাশেই রয়েছেন।

এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে ওবায়দুল কাদেরকে বিএসএমএমইউর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেয়া হয়। সেখান থেকে জরুরি ভিত্তিতে তাকে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরে এনজিওগ্রাম করলে হার্টে ব্লক ধরা পড়ার কথা জানান চিকিৎসকরা।

সেতুমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, সকালে ফজরের নামাজ শেষে হঠাৎ করেই শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা অনুভব করেন মন্ত্রী মহোদয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসকরা তার মেডিকেল চেকআপ করেন। চেকআপ শেষে তাকে দ্রুত এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দেন। পরে এনজিওগ্রাম শেষে চিকিৎসকরা জানান, তার হার্টে ৩টি ব্লক ধরা পড়েছে।

বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসকরা ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা দিচ্ছেন। গঠন করা হয়েছে মেডিকেল বোর্ডও।

এদিকে আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওবায়দুল কাদেরকে ভর্তি করা হয়। এর পর তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।

বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, চিকিৎসকরা বলেছেন- উনি (ওবায়দুল কাদের) স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন। এখন তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড বসেছে। বোর্ড পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। আমরা দলের পক্ষ থেকে উনার আরোগ্য লাভের জন্য দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের কাছে দোয়া চাই।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে হাসপাতালটিতে দলীয় নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন।

ওবায়দুল কাদেরের সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর দোয়া চেয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার পরিবার।