কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি, আজ ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদ

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খানকে গতকাল সোমবার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সনদ বাণিজ্য চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আজ মঙ্গলবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এতে তাঁর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

এর আগে সনদ বাণিজ্য চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।ডিবি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

 

সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করা আলী আকবর খানকে গতকাল চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। অন্য আদেশে কারিগরি বোর্ডের পরিচালক মামুন উল হককে চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, আকবর খানকে মঙ্গলবার ডিবি অফিসে ডাকা হয়েছে।

 

জিজ্ঞাসাবাদ করে সনদ বাণিজ্যে তাঁর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করা হবে। এ ছাড়া এ ঘটনায় যাঁদের নাম এসেছে পর্যায়ক্রমে সবাইকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ডিবি সূত্র বলছে, শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদে আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনের নাম উঠে আসে৷ গত শনিবার উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাঁকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত।

অভিযান পরিচালনাকারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, সনদ বাণিজ্যের নানা প্রক্রিয়ায় শামসুজ্জামানের নাম এসেছে। তাঁর কাছে গ্রাহক নিয়ে আসতেন দেশের আনাচকানাচে গড়ে ওঠা কারিগরি স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষরা। তাঁদের নামের তালিকাও এসেছে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।

 

এ ছাড়া সনদ বাণিজ্যের বিষয়ে জানতেন বোর্ডের ছোট-বড় সব কর্তাই। তাঁদেরও পর্যায়ক্রমে তদন্তের আওতায় আনা হবে।

 

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র তৈরিতে জড়িত একটি চক্রের সঙ্গে সেহেলা পারভীনের টাকা-পয়সা লেনদেনের ‘প্রমাণ’ পাওয়া গেছে। চক্রটি গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি জাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বানিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করেছে।

ডিবি সূত্র বলছে, গত ১ এপ্রিল রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র তৈরি ও বিক্রির অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান ও একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্য ও দেখানো মতে বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র এবং শত শত সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরির বিশেষ কাগজপত্র, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করা হাজার হাজার সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের ব্লাংক কপি, শতাধিক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা এবং গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি উদ্ধার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৫ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার সদর থানা এলাকা থেকে গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা তিনজনেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

ডিবি প্রধান দাবি করেছেন, শামসুজ্জামান ও ফয়সাল গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি জাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বানিয়ে বিক্রি করেছেন এবং বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছেন। ফলে ওয়েবসাইটে এগুলো খুঁজলে সঠিক পাওয়া যায়।

এদিকে এ ঘটনায় যেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁদেরও পর্যায়ক্রমে ডেকে এ বিষয়ে কথা বলা হবে।

 

এর আগে গত ১ এপ্রিল কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির অভিযোগে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় প্রতিষ্ঠানটির সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামানকে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে এই জালিয়াতিতে জড়িত অনেক ছোট-বড় কর্মকর্তা এবং দেশের কয়েকটি কারিগরি স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক আর অধ্যক্ষদের নাম।