কাশ্মির এখন মৃত্যুপুরী, ফুরিয়ে গেছে খাবার
পুরো ভারত এবং বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে কাশ্মীর। রাস্তায় সাধারণ মানুষ থেকে বহুগুণ বেশি সেনা আর আধা সেনা। জারি রয়েছে কারফিউ। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। ফলে অনেকের বাড়িতেই ফুরিয়ে গেছে খাবার। এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি ইন্টারনেট ও ফোনে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
৩৭০ ধারা এবং কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত হওয়ার পর সেখানকার পরিস্থিতি দেখে এ কথা জানান বিবিসি বাংলার সাংবাদিক শুভজ্যোতি ঘোষ। তার কথায় উঠে এসেছে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি।
তিনি বলেন, ‘শ্রীনগরে পা রাখার পর ২৪ ঘণ্টারও বেশি পেরিয়ে গেছে, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন মৃত্যু উপত্যকায় এসে পৌঁছেছি। রাস্তাঘাটে একশো গজ পরপরই সেনা চৌকি আর কাঁটাতারের ব্যারিকেড। মানুষের ছোট ছোট কিছু জটলা। আমার হাতে বিবিসির মাইক দেখে তারা এগিয়ে আসছেন কথা বলতে। তারা যে কতটা বিক্ষুব্ধ, সেটা তাদের চেহারাতেই স্পষ্ট।’
‘কেউ কেউ তো বলছেন, ১০ মিনিটের জন্য কাশ্মীরে জারি করা কারফিউ তুলে নেয়ার হিম্মত দেখাক সরকার, তারপরই তারা দেখবে দলে দলে কত মানুষ রাস্তায় নামে এর প্রতিবাদ জানাতে।’
‘সরকারও সেটা নিশ্চয়ই জানে, তাই তো গোটা কাশ্মীর উপত্যকা এখন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে দেয়া হয়েছে। কাশ্মীরে আমার এর আগেও আসা হয়েছে। বিভিন্ন ঘটনা-বিক্ষোভ-সংঘাতের খবর সংগ্রহ করতে। কিন্তু এরকম অবস্থা আমি এর আগে কখনো দেখিনি। কাশ্মীর এখন যেন এক মৃত্যুপুরী। রাস্তাঘাটে কোন লোকজন নেই।’
‘অনেকের বাড়িতেই খাবার ফুরিয়ে গেছে, রেশন ফুরিয়ে গেছে। কেনাকাটার জন্য সাহস করে কেউ কেউ বেরুচ্ছে না। কিছু কেনার মতো কোন দোকান খোলাও নেই। শ্রীনগরের যেসব জায়গায় আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে পুরো শহর জুড়ে একটা থমথমে পরিবেশ। চারিদিকে আতঙ্ক আর ক্ষোভ।’
বিবিসির সাংবাদিক বলেন, ‘কাশ্মীরে এখন কার্যত একটা অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে। এখানে ইন্টারনেট বন্ধ। ল্যান্ডলাইনও কাজ করছে না। এখানকার কোন নিউজ পোর্টাল রবিবার পর আর আপডেট করা হয়নি, কারণ ইন্টারনেট বন্ধ। কোন পত্রিকা বেরুতে পারছে না।’
‘দিল্লি বা জম্মু থেকে প্রকাশিত কিছু সংবাদপত্র এখানে এসেছিল আজ সকালে। নিমেষে সেগুলো উড়ে গেল। এগুলো কিন্তু তিন দিনের বাসি সংবাদপত্র। বলা হচ্ছে, এগুলোতে নাকি সেন্সরের কাঁচি পড়েছে জোরেশোরে।’
এদিকে এনডিটিভির খবরে বলা হয়, জম্মু ও কাশ্মীরে আংশিকভাবে ফোন সেবা এবং ইন্টারনেট চালু করা হয়েছে। এছাড়া শ্রীনগরের জামা মসজিদের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এলাকার ছোট ছোট মসজিদে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ওই সব মসজিদগুলির আশেপাশে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানকার সাধারণ মানুষ কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে জুমার নামাজ আদায় করেছেন।
রাজ্য পুলিশের প্রধান দিলবাগ সিং সংবাদসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘স্থানীয়দের তাদের আশেপাশের মসজিদে গিয়ে প্রার্থনা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এতে কোনও বাধা নেই। তবে তাদের এলাকা থেকে বেরিয়ে অন্য অঞ্চলে যাওয়া উচিত নয়।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার কাশ্মীর নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ঈদ উদযাপনের সময় মানুষের কোনও অসুবিধা যাতে না হয় তা নিশ্চিত করবে সরকার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন