কিশোরগঞ্জের হাওরে ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত কিষান-কিষানিরা

কিশোরগঞ্জের হাওরে খেতের পর খেত সোনালি ধানে ভরে গেছে। হাওরের বাতাসে দুলছে ধানের সোনালি শিষ। চলছে খেতভরা সেই ফসল কাটার মহোৎসব। সপ্তাহখানেক আগে থেকে টুকটাক ধান কাটা শুরু হলেও বৈশাখ মাসের প্রথম দিন থেকে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে।

কাঁচি হাতে কৃষকেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কাটায় ব্যস্ত। যেন চারদিকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের উৎসব চলছে। হাওরের সোনালি ধান কাটায় ব্যস্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষিশ্রমিকেরা।

এক দল শ্রমিক ধান কাটছেন, অন্যদিকে আরেক দল শ্রমিক ধানের বোঝা মাথায় করে এনে সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখছেন। এখান থেকে ট্রাক, লরি, টমটম ও মহিষের গাড়ি দিয়ে ধান খলায় এনে মেশিন দিয়ে মাড়াই করছেন কেউ কেউ। জমির পাশেই ধান সেদ্ধ করছেন অনেক কিষানি। কেউ আবার রোদে ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত। বাজারে বিক্রি করতে বস্তায় ধান ভরছেন অনেকে।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে জয়কা, গুণধর, উরদীঘি, ইটনা উপজেলার এলংজুরী, বড়িবাড়ী, সোহেলা হাওরে ঘুরে কিষান-কিষানিদের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে।

সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জায়গায় মেশিন দিয়েও ধান কাটা হচ্ছে। হাওরের সর্বত্রই এখন শুধু ধান আর ধান। এসব কাজে এখন নারী-পুরুষ, ছোট-বড়সহ সবাই ব্যস্ত। তা ছাড়া এবার ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষকেরাও খুশি। তবে ধানের যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেই আশা কৃষকদের।

করিমগঞ্জের বড় হাওরে একজন কৃষক তাঁর পাঁচ কানি জমিতে চাষ করা ব্রি–২৮ ধান কাটার জন্য ২২ জন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, একজন শ্রমিককে দৈনিক এক হাজার টাকা মজুরি দিয়ে এক হাজার টাকা মণের ধান কাটাতে হচ্ছে। ধানের দাম না বাড়লে কৃষকের মাথায় হাত পড়বে।

আরেক কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, ১০ কানি জমির ধান ২৫ জনের একটি ধান কাটা দলকে চুক্তি দিয়েছেন কিন্তু ধান কাটা আর ঘরে তুলে বিক্রির পর কৃষকের তেমন কিছুই থাকে না। ১ হাজার ৫০ থেকে ১১ শত টাকা ধরে ধান বিক্রি করে কৃষকের আর কী থাকে। সরকারের উচিত কৃষকদের নিয়ে ভাবা। তবে এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের অনেকটা রক্ষা। যদি সময়মতো বৃষ্টি পেত, তাহলে ধানের ফলন আরও ভালো হতো।

নিকলীর এলাকার কৃষক ফজলু মিয়া বলেন , ধান কাটার মেশিন খরচসহ অন্যান্য খরচে মণপ্রতি ধান উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। অন্তত ১ হাজার থেকে ১১ শ অথবা ১২ শ টাকা মণ দরে যদি ধান বিক্রি করা যেত তাহলে প্রকৃত সুফল পেতেন। তবে এ বছর ধানের বাম্পার ফলনে তিনি খুশি। ভালোয় ভালোয় যেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকতেই গোলায় ধান তুলতে পারেন, সেই আশা করেন।

ধান কাটতে আসা এক শ্রমিক জানান, ২১ জনের একটি দল নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে কিশোরগঞ্জের হাওরে এসেছেন। দৈনিক এক হাজার টাকা মজুরিতে তাঁরা ধান কাটছেন। তাঁরা আরও ১৫ দিন থাকবেন। তবে ধান কাটার মেশিনের কারণে আগের চেয়ে তাঁদের কদর অনেকটা কমে গেছে। না হলে এ সময়ে তাঁরা হাওরে বেশি সময় থেকে আরও বেশি আয়রোজগার করতে পারতেন।

এ দিকে ধান মাড়াইয়ের কর্মযজ্ঞ ঘিরে উচ্ছ্বাসে মেতেছে শিশু কিশোরেরাও।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: সাদিকুর রহমান বলেন, এবার জেলার ১৩ উপজেলায় বিভিন্ন জাতের ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমি। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ টন।

হাওরে এখন পুরোদমে বোরো ধান মাড়াই চলছে। পাকা ধান দ্রুত কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগে ক্ষতি না করতে পারে। এবার ধানের বাম্পার ফলন পাবেন কৃষকেরা। শেষ পর্যন্ত যেন কৃষকদের মুখে হাসি থাকে, সেই প্রত্যাশা করেন তিনি।