কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ৯ মাস ধরে বন্ধ পরিবার পরিকল্পনার ওষুধ সরবরাহ

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে টানা ৯ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পরিবার পরিকল্পনার ওষুধ ও সামগ্রী সরবরাহ। এতে করে চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজার হাজার দম্পতি। বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির শঙ্কা।
জানা গেছে, উপজেলার সদর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৪৪টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে নিয়মিত সেবা নেন উপজেলার প্রায় ৩৫ হাজার ৯৭৪ জন দম্পতি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পরিবার পরিকল্পনার জন্য ২৩ ধরণের ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নেই প্রয়োজনীয় কনডম, পিল, ইমপ্ল্যান্ট, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট। এতে করে গর্ভবতী মা ও কিশোরীরা স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেবাদান কেন্দ্রগুলো খোলা থাকলেও ওষুধ না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের।
সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
পুমদি ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, আমরা শুধু পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু রোগীরা ওষুধ না পেয়ে বিরক্ত হয়ে ফিরে যায়।
একই অবস্থা সদর পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেও। সেখানে কর্মরত এক কর্মী জানান, আগে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন রোগী আসতেন। এখন সে সংখ্যা নেমে এসেছে ১০-১৫ জনে। ওষুধ না পেয়ে মানুষ আর আসে না।
উপজেলার সিদলা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা পারভীন বেগম জানান, রোগীরা এখন ওষুধ না থাকার কথা আগেই ফোনে জেনে নেয়। অনেকে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। আমরা শুধু রক্তচাপ মেপে কিছু পরামর্শ দিয়ে বিদায় জানাই।
পরিবার পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিটি সেবাকেন্দ্রে প্রতি মাসে ৫০০ সেট খাবার বড়ির চাহিদা থাকলেও বর্তমানে বরাদ্দ মিলছে মাত্র ২০-১০০টি। তাছাড়া এ বছরের জুন মাস থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি ইমপ্ল্যান্টের সরবরাহ। ইনজেকশন থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় সিরিঞ্জ। ডিডিএস কিটেরও তীব্র সংকট চলছে।
এদিকে, সেবা না পাওয়ায় অনেক পরিবার এখন নিজেদের খরচে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে নিচ্ছেন। এতে নিম্নআয়ের পরিবারের জন্য সমস্যা তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ থাকলে এ অঞ্চলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেড়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সেবাগ্রহণকারী লোকজন।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা রুনা বেগম বলেন, ওষুধ না থাকায় এখন বাধ্য হয়ে ফার্মেসি থেকে কিনে খেতে হচ্ছে। আগে বিনামূল্যে যেটা পেতাম, এখন খরচ করতে হচ্ছে। আমাদের মতো গরিবের পক্ষে নিয়মিত কেনা সম্ভব না।
নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় এক যুবক বলেন, স্ত্রীর জন্য পিল আর ক্যালসিয়াম নিতে গিয়ে ফার্মেসিতে গিয়েছি। সব কেনা সম্ভব না। এই জন্য সরকারি কেন্দ্রের উপর ভরসা করেছিলাম।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আঞ্জুমান ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলায় সেবা দিতে আমরা আন্তরিক। কিন্তু ঊর্ধ্বতন দপ্তর থেকে দীর্ঘদিন ওষুধ সরবরাহ না থাকায় আমরা অসহায়। বিষয়টি বারবার জানানো হলেও সমাধান আসেনি।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন