কী আছে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ৬টি ধারায়?
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রস্তুতের শুরুতেই আইনটিতে কী কী বিষয় সংযুক্ত হচ্ছে তা নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে ছিল ব্যাপক কৌতূহল। যখই কোনো মন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে চেয়েছেন, সাংবাদিকদেরও ফোকাল পয়েন্ট ছিল এই আইনটি সম্পর্কে জানা।
চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি যখন মন্ত্রিপরিষদ সভায় আইনটির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে আইনের বেশ কিছু ধারা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন। এর পর থেকেই শুরু হয় কয়েকটি ধারার বিষয়ে উদ্বেগ।
গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহল থেকে জোড় প্রতিবাদ জানানো হয় আইনটির বেশ কিছু ধারা বাতিল বা সংশোধনের। এ দাবি শুধু দেশের মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে বাংলাদেশে নিযুক্ত ১১ দেশের রাষ্ট্রদূতেরও। গেল মাসের ২৫ তারিখে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা। বৈঠক শেষে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান রাষ্ট্রদূতরা।
সে সময় ১১ দেশের পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিনজ। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আইনমন্ত্রীর কাছে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বেশ কিছু ধারার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি এ ধারাগুলো সংশোধন অথবা বাতিলের। আমরা প্রয়োজনে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আবারও বসব।’
তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের সাথে বৈঠক করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। এ বৈঠকেও ঠিক ওই ৬টি তথা ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সম্পাদকরা।
আসলে কী আছে এই ৬টি ধারায়?
আইনটির ২১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার নামে প্রোপাগান্ডা চালান বা এতে মদদ প্রদান করেন তাহলে অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ২৫-এ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন করলে ৩ বছরের দণ্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা হবে।
২৮ ধারায় সাইবার সন্ত্রাসের দণ্ড নিয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌম বিপন্ন করা, জনগণের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার করার জন্য কম্পিউটার বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে বৈধ প্রবেশের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন বা বেআইনি প্রবেশ করেন বা করান তাহলে ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
আইনটির ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘৃণা বা বিদ্বেষ বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি সৃষ্টি করে তাহলে শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
আইনটির ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচর বৃত্তির অপরাধের শাস্তিতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে সরকারি আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কোনো ধরনের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ বা সংরক্ষণে সহযোগিতা করেন তার শাস্তি হবে ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন