কী হবে এই সেঞ্চুরি দিয়ে!
এক বছরও হয়নি জাতীয় দলে এসেছেন। এরই মধ্যে তাঁর ডাকনাম হয়ে গেছে ‘দ্য ক্রাইসিস ম্যান’। দল যখন ঘোরতর বিপদে, তখনই যে উদ্ধারকর্তা হয়ে ওঠেন রোস্টন চেজ। এই সিরিজেই ব্রিজটাউন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৩১ রানের ইনিংস খেলার পর বলেছিলেন, ‘ড্রেসিংরুমে এ নিয়ে সতীর্থরা খুব মজা করে। ওরা বলে, এটা যদি কোনো সুপারহিরো সিনেমা হতো, আমার সুপারহিরোর নাম হতো ক্রাইসিস ম্যান।’
কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাট করতেই যেন বেশি আনন্দ হয় চেজের। তার প্রমাণ দিয়েছেন ক্যারিয়ারের শুরুতেই। গত জুলাইয়ে অভিষেকের পর নিজের দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ১৩৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ৪৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দল তখন কাঁপছিল।
১০ টেস্টের ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ছয়বার ফিফটি কিংবা এর বেশি করেছেন। এর চারটি ইনিংসই ছিল দল ৭০ বা এর কম রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে এমন পরিস্থিতিতে! কাল নাটকীয়ভাবে শেষ হওয়া ডমিনিকা টেস্ট প্রায় একাই বাঁচিয়ে দিচ্ছিলেন। ৯৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ চার উইকেটে আরও প্রায় ৫৩ ওভার পার করে দিয়েছিল তাঁর ৩৬৬ মিনিট আর ২৩৯ বলের ইনিংসটাকে কেন্দ্র করে।
মাত্র ৭টা বল পার করে দিতে পারলে টেস্ট আর সিরিজ দুটিই ড্র করে ফেলে স্বাগতিকেরা। এমন পরিস্থিতিতে নকআউট প্রান্তে দাঁড়িয়ে চেজ দেখলেন, কী এক হঠকারী শট খেলে তাঁর সঙ্গী শ্যানন গ্যাব্রিয়েল দলকে অলআউট করে দিলেন! ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেও তাই নিজেকে ভীষণ পরাজিত মনে হচ্ছে চেজের।
কাল নব্বইয়ের ঘরে দাঁড়িয়েও অসংখ্যবার সহজ সিঙ্গেল নেননি। বরং স্ট্রাইকিং প্রান্ত আগলে রাখতে চেয়েছেন। নিজের সেঞ্চুরির চেয়ে দল বড়, বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি পেলেন, পরাজিত দলে থেকেও ম্যাচসেরা হলেন। কিন্তু বলে দিলেন, কী হবে এই সেঞ্চুরি দিয়ে। কী হবে এই ম্যাচসেরার পুরস্কার দিয়ে! দলই যদি না জেতে!
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিস্তারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দলটার নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অনেক বড় নামকরা তারকারা এখন জাতীয় দলের হয়ে খেলার বদলে টি-টোয়েন্টিতে খেলতে বেশি আগ্রহী। এমনকি এই ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত ড্যারেন ব্র্যাভোর মতো ব্যাটসম্যান, টেস্ট ক্রিকেটে দলের স্তম্ভ হয়ে উঠেছিলেন যিনি। এমন সংকটের মুখে সত্যিকারের ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন চেজ। তিন টেস্টের এই সিরিজে ১০০.৭৫ গড়ে করেছেন ৪০৩ রান। দুটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটি।
কিন্তু তবু কাল পৃথিবীর বিষণ্নতম মানুষ দেখাল তাঁকে। বললেন, ‘আমার ভাবনায় শুধু একটা ব্যাপারই খেলে যাচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে ম্যাচটা বাঁচানো। সেঞ্চুরি হলো কি না তাতে কিছু যায়–আসে না। আমি শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের বলছিলাম নিজেদের রক্ষণের ওপর আস্থা রাখতে।’
তা বিশু-গ্যাব্রিয়েলরা খেলছিলেনও ভালোই। বল ঠেকানোর কাজটা। কিন্তু গ্যাব্রিয়েলের ওই একটা শট সব প্রচেষ্টা বৃথা করে দিল। চেজ অবশ্য সতীর্থকে আড়াল করতে চাইলেন, ‘হয়তো শ্যানন এখান থেকে শিখবে। হয়তো এরপর একই পরিস্থিতিতে পড়লে ও এর চেয়ে ভালো শট খেলাটাই বেছে নেবে। ওকে দোষ দিই না, আমরা তো দল হয়েই লড়েছি।’
অবিশ্বাস্য একটা সিরিজ পার করেও যেন খুশি নন চেজ, ‘হ্যাঁ, খুব ভালো সিরিজ গেছে আমার জন্য। কিন্তু যথেষ্ট ভালো হতো পারল কই? আশা করি, এরপর আমরাই জয়ী দলের দিকে থাকব।’
বোঝাই যায়, এই যুগেও ক্যারিবীয় পতাকার হয়ে খেলতে পেরে কতটা গর্ব তাঁর; যে ক্রিকেটে টাকা নেই, তারকাখ্যাতি নেই, কেবল আছে জাবর কাটার উপলক্ষ হয়ে থাকা অতীত ইতিহাস। তবু সেটাই অনেক তরুণের কাছে এখনো অনেক বড়। অনেক সম্মানের, গর্বের। চেজ তা-ই বুঝিয়ে দিলেন। এবার এই হারাধনের রত্নটার ওপর না চোখ যায় এখনকার লোভী ক্রিকেটের!
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন