কুড়িগ্রামে আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে পাল্টে যাচ্ছে চরের মানুষের জীবনমান
কুড়িগ্রাম জেলায় বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রতিবছর অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়। বিনষ্ট হয় চরের মানুষের কৃষি ফসল। ফলে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো পড়ে চরম সংকটে। এমন পরিস্থিতিতে বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের শিকার ৪২০টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ফ্রেন্ডশিপ, বাংলাদেশ’।
তারা দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে এগিয়ে এসেছে। তাদের সহযোগিতায় এসবপরিবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে তাদের জীবনমান।
কুড়িগ্রাম জেলায় ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ছোট বড় ১৬টি নদ-নদী রয়েছে। আর এসব নদীর বুক জুড়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক চর। এই পরিবারগুলোর মধ্য থেকে জেলার চিলমারী, রৌমারী ও সদর উপজেলায় ১৪টি চরের ৪২০টি দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে উন্নয়নমূখী হতে সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণসহ পরিবারগুলোকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শাকসবজির বীজ দেওয়া ছাড়াও ভেড়া বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যাকালীন সময়েও যাতে সবজি উৎপাদন অব্যাহত থাকে সে জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে সংস্থাটি। বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত করায় গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বস্তায় আদা চাষ করা হচ্ছে। সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও ব্যবহারে সহায়তা প্রদান করছে।
শনিবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ভগবতিপুর চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই গ্রামের বাসিন্দা জরিনা বেগম জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্প থেকে আমার ৪হাজার ১শত টাকা দিয়ে একটি ভেড়া দিয়েছে। সেটি থেকে ২টি বাচ্চা হয়েছে। এখন তার৩টি ভেড়া যার বাজার মূল্য ২৭ হাজার টাকা।
একই এলাকার ফেরদৌসী বেগম জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে শাক সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদন করে এবছর ২২হাজার টাকা বিক্রি করেছি। যা আমার সাংসারিক ব্যয় বহন করে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পেরেছি। স্বামীর একার আয়ের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না।
ওই গ্রামের সাজিরন বেগম বলেন, ‘প্রকল্প থেকে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমি বসতবাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন করছি এবং প্রতি মাসে ২ হাজার টাকার কেঁচো সার বিক্রি করছি। একই এলাকার সাদেকুল ইসলাম জানান, ‘ফ্রৈন্ডশিপের সহায়তায় ৩৫টি বস্তায় আদা চাষ করে প্রতি বস্তায় ১ থেকে দেড় কেজি আদা পাবেন বলে তিনি আশাবাদি।’
৩০টি বন্যাকবলিত পরিবার পারিবারিক আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ড ছাড়াও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত হয়েছেন।
ফ্রেন্ডশিপের ট্রান্সজিশনাল ফান্ড (এএসডি) প্রজেক্টের রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, সদস্যদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন ও স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলার মোট ১৪টি চরে এবছর ৪২০ জন সদস্যকে উক্ত প্রকল্প সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, ‘উক্ত প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক উপকারভোগীদের পূর্বের ন্যায় প্রশিক্ষণ প্রদানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে এবছর ৪২০টি পরিবারকে ভেড়া প্রদান ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলে পরিবারগুলোর ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যেকটি ভেড়াকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত। তাই ভেড়া পালনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন