কুবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী যারা
গত ২০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ থেকে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহবানকরা হয়।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় নেতারা সরাসরি ক্যাম্পাসে এসে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) গ্রহণ করেন।
এদিকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত নির্দিষ্ট ১০ কার্যদিবস শেষে আজ সোমবার ১১ টায় প্রশাসনিক ভবনের ৪১১ নাম্বার রুমে পদপ্রত্যাশীদের সিভি গ্রহণের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
২০১৭ সালে হওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের ১৬১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির (ইলিয়াস-মাজেদ) মেয়াদ ফুরিয়েছে অনেক আগেই। এর মধ্যে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি বিলুপ্তির কথা বলা হলেও সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি কিছুক্ষন পর সরিয়ে নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এরপর আবার অক্টোবরের ২০ তারিখে নতুন কমিটিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা গ্রহণের করবেন বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এরপর থেকেই নতুন কমিটি নিয়ে আলোচনা চলছে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। তবে এর বহু আগে থেকেই নতুন কমিটির পদপ্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ইলিয়াস ভাই দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। একে তো শিক্ষাজীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে তিনি পদ পেয়েছেন, অন্যদিকে কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি আসছে না। ইলিয়াস ভাই ১ম ব্যাচের ছাত্র, ক্যাম্পাসে এখন ১৫ তম ব্যাচ চলে এসেছে। ফলে পদের অপেক্ষায় থাকা যোগ্য ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সংখ্যা অনেক। সংখ্যা যেহেতু বেশি, তাই আগেই অনুমান করা সম্ভব না।’
গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার জন্য যারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অনেকের নামই আসছে আলোচনায়। এই তালিকায় আছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-ইলাহী, ইলিয়াস-মাজেদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বজন বরণ বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের যুগ্ম সম্পাদক মুমিন শুভ, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সভাপতি রাফিউল আলম দীপ্ত, একই হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, কাজী নজরুল ইসলাম হলের সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ, ইলিয়াস-মাজেদ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাত সায়েম, একই কমিটির প্রচার সম্পাদক রকিবুল হাসান রকি। তবে রাজনৈতিক কৌশল বলে তারা কেউই প্রতিবেদকের কাছে নির্দিষ্ট করেননি কোন পদের প্রত্যাশা তারা করছেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আলিফ-রেজা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সোহাগ-জাকির কমিটির সাবেক সহ সম্পাদক রেজা-ই-ইলাহী এ ব্যাপারে বলেন, সামনে নির্বাচন আছে, সেসময় নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করা এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এবং এমপি মহোদয়ের (লোটাস কামাল) যেকোনো কাজে, নির্বাচনী কাজে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখাকে এগিয়ে নিবো। এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মান যেনো অক্ষুণ্ণ থাকে সে চেষ্টা করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের যত দাবি আছে তাদের পাশে থেকে পূরণ করার চেষ্টা করবো, শেষ রক্ত দিয়ে হলেও সবার জন্যই কাজ করে যাবো শেষ পর্যন্ত।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাফিউল আলম দীপ্ত বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। সবার মতো আমারও প্রত্যাশা ভালো পদের। আমি আসলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবো।
ইলিয়াস-মাজেদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বজন বরণ বিশ্বাস সামনের কমিটিতে পদপ্রাপ্তির বিষয়ে বলেন, এখানে ক্যান্ডিডেট যে কেউ হতে পারে। এখানে কোনো সমস্যা নেই। যোগ্যতার ভিত্তিতেই সব হবে। আমার যোগ্যতা কতটুকু এটা সবাই জানে। নেতৃত্বে আসতে পারলে ভালো কাজের মাধ্যমে ছাত্রলীগের কুবি ইউনিটকে এগিয়ে নিব। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সকল দাবির পাশে থাকবো।
আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম এ ব্যাপারে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকে ছাত্র রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের তখনকার কমিটির সবর্কনিষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক পদ হোল্ড করি৷ তারই ধারাবাহিকতায় আমার প্রেসিডেন্ট সবুজ ভাই ও মাজেদ ভাইর নির্দেশ মোতাবেক আমি আমার সাংগঠনিক কার্যক্রম স্বতঃস্ফূর্তভাবে করে যাই৷ ছাত্র রাজনীতিতে আসার আগে আমার একটা পরিচয় আছে সেটা হচ্ছে আমি একজন আওয়ামী পরিবারের সন্তান। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করছি, ভবিষ্যতেও করবো সেহেতু আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ পদের দাবিদার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমিন শুভ এ ব্যাপারে বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ছায়াতলে দীর্ঘদিন যাবত রাজনীতি করে আসছি। যারা রাজনীতি করছে তাদের ভেতর পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, অনেকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতো না। এলাকায় তাদের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখতে গেলে দেখা যাবে যে তারা অন্য কোনো সংগঠন বা দলের সাথে জড়িত ছিলো। তাদের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড ভিন্ন। আমরা চাইবো এদিকে যাতে জামায়াত বা ছাত্রদলের কেউ যাতে এদিকে না আসুক বা এমন কোনো দলের পরিবারের কেউ যেনো উঠে না আসে।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগ সারা বাংলাদেশের একটা মডেল ইউনিট৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরে এবং আমার আগে যারা আসছে অনেকেই আসলে সভাপতি সেক্রেটারি পদপ্রার্থী এবং তারা যথেষ্ট দাবিদারও এটার। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ইলিয়াস ভাই-মাজেদ ভাইয়ের রাজনীতি করেছি। এখানে আসলে আমাদের ৫ টা হল আছে৷ এখান থেকে অনেকেই সভাপতি-সেক্রেটারি ক্যান্ডিডেট সেক্ষেত্রে আমিও ব্যতিক্রম নই৷ তবে, ইলিয়াস ভাই-মাজেদ ভাইয়ের সিদ্ধান্তই আমার জন্য চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত৷
কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অনেকে রাজনীতি করে আসছে। সকলেরই আশা থাকে ভালো অবস্থানে যাওয়ার। এখানে অনেকেই আছে রাজনীতি না করেই পদপ্রত্যাশী, তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সতর্ক থাকবে এবং মাঠের কর্মীকে মূল্যায়ন করবে বলে আশা করি।
ইলিয়াস-মাজেদ কমিটির প্রচার সম্পাদক রকিবুল হাসান রকি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি ছাত্ররাজনীতি করে আসছি। যদি সামনে নেতৃত্বে আসতে পারি তাহলে তাদের অধিকার আদায়ে যৌক্তিকভাবে পাশে থাকবো। এছাড়া নেত্রীর ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাব।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহারাতবির হোসেন পাপন মিয়াজী, একই হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাসার সাকিব, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হাসান বিদ্যুৎও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে।
কুবি শাখা ছাত্রলীগ ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে জীবনবৃত্তান্ত গ্রহণ করবো। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সংসদের অভিভাবকেরা যাচাই-বাছাই করে একটি সুন্দর কমিটি উপহার দিবেন আশা করি।
এ ব্যাপারে কুবি শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বে ছিলাম। নতুন নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যেই জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছে কেন্দ্র। যারা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতি করেছে, মাদকাসক্ত নয়, ফৌজদারি মামলায় আসামি নয় এমন কেউ নেতৃত্বে আসুক এমন প্রত্যাশা করি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন