কুবিতে ‘দীর্ঘ ছুটি’ নিয়ে মতবিরোধ শিক্ষার্থীদের
ইমদাদুল হক মিরন, কুবি প্রতিনিধি : দীর্ঘ অবকাশকে সামনে রেখে অস্বস্তি প্রকাশ করছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটের মত গুরুতর অ্যাকাডেমিক সীমাবদ্ধতার মাঝে আসন্ন এই দীর্ঘ (প্রায় ৪৫ দিন) ছুটির বিরোধিতা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার সূত্রে জানা যায়, গ্রীষ্মকালীন অবকাশ, শব-ই-ক্বদর, জুমাতুল বিদা ও ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি হিসেবে আগামী ৫ মে থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবধরনের একাডেমিক কার্যক্রম। রোজা শুরুর আগেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলেও ঈদের এক সপ্তাহ গড়ানোর মধ্যেই আবারও ক্যাম্পাস খুলে যাবে। এই অদ্ভুত ও বিব্রতকর অবকাশসূচির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়া। তারা চান, অন্তত রমজানের ১৫ দিন পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা চালু থাকুক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাহ্ করিম সাজিদ বলেন, ‘আমাদের প্রায় অর্ধবছরই (১৭২ দিন) বন্ধ থাকে। এর ফলে ভুগছি সেশনজটে। রমজানে শুক্র-শনিবার এবং অন্যান্য বন্ধ মিলে প্রায় ৪৫ দিনের বন্ধ, যার মধ্যে গ্রীষ্মকালীন অবকাশও আছে। এই বন্ধ কমিয়ে ১৫ রমজান পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম চালু রাখলে সেশনজট অনেকটাই কমবে।’
একাধিক শিক্ষার্থীর অভিমত, ১৫ রমজান পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখে ঈদের পর সেই ছুটি কিছুটা দীর্ঘায়িত করলে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত অর্থেই অবকাশ কাটানোর সুযোগ পাবেন। রবিউল ইসলাম নামের বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা যারা বাড়ি থেকে অনেক দূরে থেকে পড়াশোনা করি, তারা ঈদের সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পরিবার ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসা একটু কষ্টের। অবকাশ দেরিতে শুরু করে এর শেষ হওয়ার দিনক্ষণ আরও একটু পেছানো যেতে পারে।’
এদিকে সেশনজট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগ রমজান মাসে ছুটির মাঝেই পরীক্ষা চালু রাখবে বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে সব বিভাগে একযোগে পাঠদানের সুযোগও উন্মুক্ত রাখলে বাধা কোথায়?— এমন প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের।
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ মণি বলেন, ‘পেশাগত কারণে অনেক সময় অবকাশেও ক্যাম্পাসে থাকতে হয়। রমজান মাসে লোকজনের অভাবে পুরো এলাকা ভূতুড়ে রূপ ধারণ করে। অথচ একই সময়ে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলতে থাকে।’
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘রমজানে ক্লাস বন্ধ থাকলেও সেমিস্টার পরীক্ষা যদি দিতে পারি তাহলে ক্লাস করতেও সমস্যা নেই। তাও আমাদের সেশনজট কমুক।’
একাধিক শিক্ষার্থীদের দাবি- সেশনজট দূরীকরণের লক্ষ্যে কাজ করা প্রশাসন রোজার বন্ধ কমিয়ে আনলে তা ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে পারে। যদি বন্ধ বেশি দিন দিতেই হয় তাহলে ঈদের পর কিছুদিন বেশি ছুটি দিয়ে রোজায় একাডেমিক কার্যক্রম চালু রাখা হোক। সেক্ষেত্রে ঈদের আনন্দও উপভোগ করা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের জানান, ‘গ্রীষ্মকালীন ছুটি সংযুক্ত হওয়ায় বন্ধ ছুটি বেশি দেখাচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীরা চাইলে আলোচনাসাপেক্ষে ছুটির সূচি পরিবর্তন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অফিস চলাকালীন সময়ে আরও কিছুদিন ক্লাস-পরীক্ষা চলতে পারে। এ বিষয়ে শীঘ্রই আমি উপাচার্য মহোদয়ের সাথে কথা বলবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসন্ন ছুটির মাঝে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চাইলে স্বেচ্ছায় ক্লাস-পরীক্ষা চলমান রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে হলগুলো খোলা রাখার ব্যাপারেও চিন্তা করবো।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন