কুমিল্লা কারাগারে বন্দিকে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল; ৫ কারারক্ষী বরখাস্ত
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বন্দিকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
৫ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মেঝেতে এক বন্দিকে পিছমোড়া করে বেঁধে পেটানো হচ্ছে। তাকে ঘিরে রয়েছেন কয়েকজন কারারক্ষী।
কারা সূত্রে জানা গেছে, ওই বন্দির নাম শাহজাহান বিলাশ। তিনি ভারতের ত্রিপুরা জেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা।
পাঁচটি মামলায় ৫৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে শাহজাহানের। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে সাজা ভোগ করছেন। গত আট বছর ধরে কুমিল্লা কারাগারে রয়েছেন শাহজাহান।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে পাঁচজনকে বরখাস্ত করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে বন্দি পেটানোর দায়ে বরখাস্ত হয়েছেন সহকারী প্রধান কারারক্ষী শাহনেয়াজ আহমেদ এবং কারারক্ষী দিদারুল ইসলাম। অন্যদিকে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বাইরে পাঠানোর অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন কারারক্ষী শরিফুল ইসলাম, অনন্ত চন্দ্র দাশ এবং চরণ চন্দ্র পাল।
কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা শুনে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন চরণ চন্দ্র পাল। পরে তাকে উদ্ধার করে কারা হাসপাতালে ভর্তি করেন সহকর্মীরা।
বন্দি পেটানোর ঘটনা নিয়ে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার মো. আসাদুর রহমান বলেন, ‘আসলে ওই রকম বেধড়ক পেটানো হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘১৬ এপ্রিল শাহজাহানের কক্ষ তল্লাশি করে মাদক পাওয়া যায়। পরদিন ১৭ এপ্রিল তাকে আলাদা সেলে পাঠানো হয়। সেল পরিদর্শনে গেলে শাহজাহান বলে সে আর সেলে থাকতে পারবে না। তাকে অন্য বন্দি ও কয়েদিদের মতো করে রাখতে হবে।
‘১২ মে কেস টেবিলে আনলে সে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আমাদের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ। ওনার সামনেই শাহজাহান বিলাস নিজের মাথা দিয়ে লোহার দরজায় আঘাত করে। তাকে যতই নিবৃত্ত করতে যাই, সে ততই উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে থাকে। পরে তাকে রক্ষীরা লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে তার অঙ্গহানি বা অন্য কোনো সমস্যা হয়নি।’
অভিযোগের বিষয়ে সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, ‘এক বছর আগে যোগদানের পর আমি কারাগারে মাদক সেবনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। সে সময় সহকারী প্রধান কারারক্ষী তরিকুল ইসলামকে ৫২২ পিস ইয়াবাসহ আটক করি। বর্তমানে সে জেলে আছে।
‘তরিকুলসহ আরও কয়েকজন মিলে আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অপপ্রচার চালাইতেছে। আপনারা ভিডিওতে দেখবেন ওইভাবে বিলাশকে পেটানো হয়নি। আমরা বিলাশকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছিলাম মাত্র। এর বেশি কিছু না।’
বন্দিকে পেটানো যায় কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আসলে কোনো বন্দিকেই পেটানো যায় না। আমরা উপায় না পেয়েই লাঠি দিয়ে কয়েকটা আঘাত করেছি। তবে এরপরই কারা চিকিৎসক বিলাশকে দেখেছেন। সে সুস্থ আছে।’
বন্দি পেটানোর ঘটনা সামনে আনায় তিন কারারক্ষীকে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হলো এমন প্রশ্নে কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্ত ওই তিনজন বিষয়টি আমাদেরকে জানাতে পারতেন। তা না করে তারা আগে যারা মাদক সংশ্লিষ্টতায় চাকরি হারিয়েছে তাদের সাথে যোগসাজশে সিসিটিভির ফুটেজ বাহিরে পাঠিয়েছে। এটা স্পষ্টতই জেলকোডের বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ কারণে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যে দুজন বন্দিকে পিটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন