কুমিল্লায় পাগলার ঘরে মিললো আড়াই কোটি টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার
কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় বিশা পাগলার নামের এক মৃত ব্যক্তির ঘর থেকে নগদ দুই কোটি ৪৫ লাখ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ স্বর্ণালংকার উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী।
বুধবার (১৩ জুলাই) সকালে উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের গাজীপুর মাজার এলাকায় ওই ব্যক্তির ঘর থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার সাধারণ মানুষের সামনে বের করা হয়। এরপর পাঁচ ওয়ারিসের হাতে এ টাকা তুলে দেয় পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুধীন চন্দ্র দাস।
মৃত ঐ ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আমির হোসেন ওরপে বিশা পাগলা। বিশা পাগলা তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের বড় গাজীপুর গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, তিতাসের গাজীপুর গ্রামে বিশা পাগলা নামে পরিচিত মরহুম হাজ্বী আমির হোসেনের ঘরে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া গেছে এমন খবর পেয়ে বুধবার সকাল থেকে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ শতশত নারী-পুরুষ মরহুমের বাড়িতে সমবেত হয়।
এমসয় উক্ত টাকা উপস্থিত সকলের সামনে বস্তাবন্দী করে মরহুম বিশা পাগলার বিল্ডিংয়ের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে পুলিশি পাহারায় রাখা হয়।
পুলিশ জানায়, মৃত আমির হোসেন ওরফে বিশা পাগলার ঘরে রোখে যাওয়া স্টিলের আলামারীতে প্রায় দুই কোটি ৪৫ লাখ নগদ টাকা, ৫-৬ ভরি স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মূদ্রা পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, আমির হোসেন ওরফে বিশা পাগলার স্ত্রী-সন্তান নেই। তবে তিনি এক ভাগ্নিকে দত্তক নিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) তার গোপন কক্ষ থেকে এসব স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা-পয়সা উদ্ধার করেন তার দত্তক মেয়ে তাছলিমা আক্তার ও স্থানীয়রা। পরে পুলিশকে খবর দেয় তারা।
পুলিশ এসে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সারা রাত সেই বাড়ি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মুড়ে রাখে। পরে বুধবার (১৩ জুলাই) দুপুরে তার পাঁচ ওয়ারিসের হাতে এ টাকা তুলে দেয় পুলিশ।
স্থানীয়রা জানায়, ৪০ বছর ধরে বিশা পাগলা নিজ গ্রামের গাজীপুর মাজার শরীফের পাশে একটি বাড়িতে থাকতেন এবং মাজারের খাদেম হিসেবে কাজ করতেন।
শুক্রবার (৮ জুলাই) বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পরে তার গোপন কক্ষে থাকা আলমারি ও ওয়ারড্রব খুলে দেখা যায় টাকার টাকার পাহাড়। ওই আলমারিতে থাকা টাকার বান্ডিলগুলোতে সবচেয়ে বেশি আছে পাঁচশ’ ও এক হাজার টাকার নোট এবং প্রত্যেক বান্ডিলেই টাকার পরিমান এক লক্ষ টাকা।
স্থানীয় আফরোজা নামের একজন জানান, অসুস্থ হলেও তিনি কখনও ডাক্তারের কাছে যেতেন না। নিজে কিছু কিনে খেতেন না। কোথাও গাড়িতে চড়ে যেতেন না। এভাবেই তিনি টাকাগুলো সংরক্ষণ করেছেন। এই মাজারে আসা ভক্তরা তাকে স্বর্ণালঙ্কার, বিদেশি মুদ্রা ও নগদ টাকা দিয়ে যেতেন। এছাড়াও তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় ভ্রমণ করতেন। তখন তার ভক্তরা তাকে টাকা পয়সা দিতে সেগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরে জমা করতো।
টাকা গোনার সময় উপস্থিত ছিলেন তিতাসের স্থানীয়রা। তারা জানান, প্রশাসনের উপস্থিতিতে এই টাকা গুনে ব্র্যাক ব্যাংকে তার ওয়ারিশদের পাঁচজনের যৌথ একটি নতুন একাউন্টে রাখা হয়েছে।
তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুধীন চন্দ্র দাস জানান, বিশা পাগলা গাজীপুর মাজারের পাশের থাকতেন। উনার এই টাকা মুলত এই মাজারে ঘুরতে আসা ভক্তরা দিয়েছে। তার তিনি জীবিত অবস্থায় ঘরে কাউকে ঢুকতে দিতেন না। তাই এই টাকার কথা কেউ জানত না। মারা যাওয়ার পর উনার ওয়ারিশরা এই টাকা দেখে পুলিশকে জানালে থানা থেকে পুলিশ পাঠিয়ে টাকাগুলো গুনে ব্রাক ব্যাংকে তার পাঁচ আত্মীয়ের নামে খোলা একটি নতুন একাউন্টে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
তিতাস উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম মোর্শেদ বলেন, আমরা এর আইনি দিকগুলো দেখছি। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পারিবারের সদস্যরা জানান, তার শেষ ইচ্ছা ছিলো একটি মসজিদ তৈরীর করার। তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি দিয়ে একটি মসজিদ এবং বৃদ্ধাশ্রম তৈরী করা হবে এমন আশা প্রকাশ করেন তারা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন