কুড়িগ্রামে একাধিক যুবকের সাথে বিউটিশিয়ানের প্রতারণার
১৩টি সিম কার্ড দিয়ে যুবকদের টার্গেট করে ফাঁদে ফেলে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে ফেরদৌসী নামের এক ডিভোর্সি নারী বিউটিশিয়ানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপারসহ একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে ভূক্তভোগী যুবক বাদল চন্দ্র রায়।
জানা গেছে, প্রতারণার মাধ্যমে হিন্দুধর্মালম্বী এক হিন্দু যুবককে মুসলিম বানিয়ে কোর্টের মাধ্যমে এভিডেভিড করে কাবিনামায় ১ লাখ টাকা দেনমোহর ধরে বিয়ে করার অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নেয় ফেরদৌসী আক্তার নামের ওই বিউটিশিয়ান।
অভিযুক্ত ফেরদৌসী আক্তার নাগেশ্বরী উপজেলার সুখ্যাতি গ্রামের বালাটারি এলাকার মোঃ কুদ্দুস আলীর মেয়ে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাদল চন্দ্র রায় কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বাদল চন্দ্র রায় ফুলবাড়ী উপজেলার বালারহাট গ্রামের হরিকান্ত রায়ের ছেলে। এছাড়াও তার স্ত্রী ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, বাদল চন্দ্র রায় এভারেস্ট ফার্মাসিটিক্যাল নামের একটি ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিভ হিসাবে নাগেশ্বরী উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। কর্মরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ক্লিনিক হাসপাতালে ডাক্তার ভিজিট ও কোম্পানির কাজে সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রিসিপশনে থাকা ফেরদৌসী আক্তারের সাথে পরিচয় হয় তার। এর পর ফেরদৌসী বিভিন্ন সময় ফোনে বাদল চন্দ্রের সাথে কথা বলতো। কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিভ হিসাবে তার সাথে ভাই বোনের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিভিন্ন সময় অর্থনৈতিক সমস্যা দেখিয়ে ৫ হাজার ১০ হাজার টাকা ধার নিতেন।
পরবর্তীতে সে টাকাও ফেরত দিতো। ফেরদৌসী রিসিপশনে চাকরি করা অবস্থায় সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক ব্যক্তির সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ধরা পড়ে। এতে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে চাকরিচ্যুত হয়ে পড়েন। বাবার অভাবের সংসার কাজ কর্ম না থাকায় বিউটি পার্লার দেয়ার কথা বলে বাদল চন্দ্রের কাছে দেড় লক্ষ টাকা ধার নেয়। পরবর্তীতে ধারের টাকা চাইলে বাদলের সাথে নানান টালবাহানা শুরু করে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর সে নিজেকে বাদল চন্দ্রের স্ত্রী হিসেবে দাবি করে মেসেঞ্জারে কাবিন নামা, ধর্মান্তরিত হওয়ার কাগজ পত্র পাঠিয়ে দিয়ে তাকে হুমকি ও জিম্মি করে। এতে বাদল চন্দ্র রায় কর্মরত এলাকা নাগেশ্বরীতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে নিজের জীবন জীবিকার পথ বন্ধ হওয়াসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বাদল চন্দ্র। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে অবশেষে পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
অনুসন্ধানে আরও উঠেছে ফেরদৌসীর প্রতারণার ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে। বিউটিশিয়ানের আড়ালে ১৩টি সিম কার্ড ব্যবহার করে একাধিক পুরুষের সাথে গড়ে তুলেছেন অনৈতিক সম্পর্ক। বাদল চন্দ্রকে মোবাইল ম্যাসেঞ্জারে রংপুরের মিঠাপুকুর জনৈক কাজী কর্তৃক বিয়ের কাবিননামার কপি দিয়েছেন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ওই নামের কোন কাজি ওই উপজেলাতে নেই।
ভুক্তভোগী বাদল চন্দ্র রায় বলেন, আমি এমন একটা পরিস্থিতি পড়েছি যা বলার ভাষা নাই। বাড়িতে প্রচুর অশান্তি চলছে। বাইরে যেতে পারছি না। এছাড়াও কর্মস্থলেও যেতে পারছি না। একদিকে কোম্পানি অন্য দিকে ওই মেয়ের যন্ত্রণা সইতে পারছি না। ওই মেয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। আমি এই মিথ্যে অভিযোগ থেকে মুক্তি চাই।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ফেরদৌসী আক্তার এর সঙ্গে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক অপু সরকার বলেন, এবিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের সভাপতিকে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য নাগেশ্বরী সার্কেলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন