কুড়িগ্রামের উলিপুরে পিআইও’র বিরুদ্ধে দরপত্রের প্রকাশ্য লটারির ফল পরিবর্তনের অভিযোগ
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সিরাজুদ্দৌলার বিরুদ্ধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীন ‘গ্রামীণ রাস্তার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু/কালভার্ট নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের দরপত্রের প্রকাশ্য লটারির ফল পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে। লটারির ফলাফল পরিবর্তন করে নিজ অফিসের কার্যসহকারীর ভাইয়ের নামে কাজ দেওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ‘গ্রামীণ রাস্তার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু/কালভার্ট নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে উলিপুর উপজেলায় ০৫টি (পাঁচ) গ্রুপের দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা পরিষদ হলরুমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এসব দরপত্রের প্রকাশ্য লটারি অনুষ্ঠিত হয়।
লটারিতে উলিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনও, উলিপুর পৌর মেয়র, উপজেলা প্রকৌশলী, ভাইস চেয়ারম্যান ও পিআইও সহ দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রকাশ্য লটারিতে পাঁচটি গ্রুপে বিজয়ী ঠিকাদার নির্বাচিত হন।
এসময় ১ নং (এক) গ্রুপের কাজটি পান কম্পারেটিভ স্টেটমেন্ট (সিএস) তালিকার ১৫৯ নং ক্রমিকের মেসার্স অর্ক ট্রেডার্স। কিন্তু লটারির পরে অর্ক ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আবু বক্কার সিদ্দিক পিআইও সিরাজুদ্দৌলার সাথে দেখা করে কাজের প্রক্রিয়া অগ্রগামী করতে গেলে তিনি নানা টালবাহানা শুরু করেন।
লটারির দুই সপ্তাহ পর পিআইও ঠিকাদারকে জানান, ‘কাজটি নিয়ে সমস্যা হয়েছে। লটারিতে আসলে ১৫৯ ক্রমিক নয় ১৬৯ ক্রমিকের গুটি উঠেছে। কাজটির জন্য এক জনের কাছে ৮ লাখ টাকা নিয়েছি। বিষয়টি মেটাতে ইউএনও এবং সাংবাদিকদের চার লাখ টাকা দিতে হয়েছে। বাকি চার লাখের আমার জন্য ২ লাখ রেখে আপনি ২ লাখ নিয়ে যান ।’
অভিযাগপত্রে ভুক্তভোগী ঠিকাদার দাবি করেছেন, পিআইও’র এমন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পিআইও তার কাজ বাতিলের হুমকি দেন এবং বিজয়ী ঠিকাদারের তালিকা পাল্টে অর্ক ট্রেডার্সের ক্রমিকের স্থলে মা এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানের ক্রমিক বসিয়ে নতুন তালিকা তৈরি করেন। মা এন্টারপ্রাইজের মালিক আশিকুর রহমান পিআইও অফিসের কার্যসহকারী আনিছুর রহমান মুকুলের আপন ছোট ভাই।
অভিযোগকারী ঠিকাদার আবু বক্কার জানান, পিআইও’র প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি (পিআইও) লটারির ফল পরিবর্তন করেছেন। তিনি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ফলাফল সিটে শুধু ক্রমিক নম্বর বসিয়েছেন কিন্তু বিজয়ী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম লিখেননি যা বিধি বহিভুর্ত। সিএস এবং ফলাফল সিটে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক এবং অপর আরও এক সদস্যের স্বাক্ষর নেই।
তিনি বলেন, ‘পিআইও নিজে ব্যবসা করার উদ্দেশে নিজ অফিসের কর্মচারির ভাইকে বিজয়ী দেখানোর অপচেষ্টা করছেন। লটারির দিন হল রুমে উপস্থিত সকল ঠিকাদার স্বাক্ষী দিচ্ছেন লটারিতে অর্ক ট্রেডার্স বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু পিআইও সম্পূর্ণ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লটারি ফল পরিবর্তন করেছেন। আমি এ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে টেন্ডার কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা প্রকৌশলী সাদেকুল আলম বলেন, ওই দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিতে আমি আহ্বায়ক কিনা তা জানি না। আমি সিএস কিংবা ফলাফল সিটে কোনও স্বাক্ষর করিনি। এ ব্যাপারে তিনি পিআইও সিরাজুদ্দৌলার সাথে কথা বলা পরামর্শ দেন।
পিআইও সিরাজুদ্দৌলা বলেন,‘ ঠিকাদারের অভিযোগ সঠিক নয়। তার নামে লটারিতে কাজ ওঠেনি। টাকা লেনদেনের অভিযোগও সঠিক নয়।’
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়কের স্বাক্ষর ছাড়া সিএস তৈরি এবং লটারির ফলাফল সিট তৈরি বৈধ হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে পিআইও কোনও সদুত্তোর দিতে পারেননি।
ফলাফল সিটে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম না লেখা এবং কমিটির সদস্যদের পদবী ভুল লেখার বিষয়টি স্বীকার করে পিআইও বলেন, এটা ভুল হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিপুল কুমার দরপত্রের লটারিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ২৬ মার্চের পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লটারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে ইউএনও বলেন, আমাদের উপস্থিতিতে লটারি হলেও সেদিন আমরা লটারি সংক্রান্ত কোনও কাগজে স্বাক্ষর করিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন