কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রিতে কৃষকদের অনিহা

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে চলতি মৌসুমে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হলেও সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিতে আগ্রহ নেই কৃষকের। সরকার নির্ধারিত দাম ও বাজার দাম কাছাকাছি হওয়ায় এবং গুদামে ধান দিতে গিয়ে কৃষক নানাভাবে হয়রানির শিকার হওয়ায় সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে অনিহা কৃষকদের। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারি ঘোষণার নির্ধারিত তারিখ পেরিয়ে গেলেও মাত্র ১৫শতাংশ ধান জমা পড়েছে খাদ্য গুদামে।

উপজেলার জয়মনিরহাট খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে অভ্যন্তরীণ ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের আওতায় উপজেলার নিবন্ধিত ১৩ হাজার ৪০০ জন কৃষকের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ৭৬৭ জন কৃষককে ৩ মেট্রিক টন করে ধান জমাদানের জন্য নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৮০ টাকা মণ দরে ২ হাজার ৩০৩ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহ করা হবে।

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী গত ৫ জুনের মধ্যে নির্বাচিত কৃষকদের ধান জমা দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। নির্বাচিত কৃষকরা গত বৃহস্পতিবার (৯ জুন) পর্যন্ত ২০১ মেট্রিক টন ধান জমা দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১৫ শতাংশ ধান সংগ্রহ হয়েছে। লটারির মাধ্যমে ধান জমাদানের জন্য নির্বাচিত কৃষকদের প্রায় ৮৫ শতাংশই এখনো ধান জমা দেননি।

উপজেলার কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে মোটামুটি শুকনো মোটা ধান ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গুদামে ধান দিতে হলে তা ভালো করে শুকিয়ে ঝাড়াই করে পৌঁছে দিতে হয়। এতে সরকার নির্ধারিত দামে গুদামে ধান দেওয়া আর বাজারের দামে বিক্রি করা একই সমান। গুদামে ধান দিতে গেলে বরং বেশি পরিশ্রম করতে হয়।

পাইকেরছড়া ইউনিয়নের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘গুদামে ধান দিতে হলে ব্যাংকে হিসাব খুলতে হয়। গুদামে ধান জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হয়। একবার গুদামে যাও আরেকবার ব্যাংকে যাও আমরা কৃষক আমাদের এত দৌড়াদৌড়ির সুযোগ কোথায়?’

তিলাই ইউনিয়নের বোরোধান চাষি আবুল কালাম ও আব্দুস সামাদ বলেন, মোটামুটি শুকনা ধান বাড়ি হতে ৯৫০ থেকে ৯৭০ টাকা মণ দরে কিনছেন ব্যবসায়ীরা। গুদামে ধান দিতে হলে ভালো মতো শুকিয়ে ঝেড়ে দিতে হয়। এতে প্রতি মণে ৪ থেকে ৫ কেজি কমে যায়। এছাড়া গুদামে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া লাগে। সবমিলিয়ে বাজারের ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করাই লাভজনক।

জয়মনিরহাট খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনার রশিদ বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় গুদামে ধান দিতে কৃষকদের আগ্রহ কম। তবে আশা করা যায় সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’