ক্রাইস্টচার্চ হামলায় ১০ বাংলাদেশি ক্ষতিগ্রস্ত : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবারের হামলায় ১০ বাংলাদেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। এছাড়া এ ঘটনায় আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশে লাশ আনতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেবে সরকার।
শনিবার রাজধানীর ইস্কাটনের বিস অডিটোরিয়ামে কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ডিক্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের সভাপতি রাহীদ ইজাজের সভাপতিত্বে এবং ডিকাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিবের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান, বিস চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এছাড়া ডিকাবের সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে আলমগীর হোসেন, শ্যামল দত্ত, আমান উদ দৌলা মোস্তফা কামাল, আনিস আলমগীর প্রমুখ বক্তব্য দেন।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, নিউজিল্যান্ডের সন্ত্রাসী ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। এরই মধ্যে দূতাবাসের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম এবং ডেপুটি হাইকমিশনার তারেক ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছেছেন। নিউজিল্যান্ডের হাসপাতালে রোগীর ধারেকাছে যাওয়ার বিধান নেই। এ কারণে তাদের তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
শাহরিয়ার বলেন, আহতদের মধ্যে লিপি ও মুহতাসিফের অবস্থা সংকটাপন্ন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসান রুবেল, মো. ওমর ফারুক ও শাহজাদা আক্তার। এছাড়া মোজাম্মেল হক, শাওন ও জাকারিয়া ভূঁইয়া নামে তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, নিউজিল্যান্ড সরকার আহতদের চিকিৎসাসেবা দেবে। বাংলাদেশের হাইকমিশন থেকে সেদেশের সরকারকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে হাইকমিশন যোগাযোগ করেছে। তারা লাশ দেশে আনতে চাইলে সরকার সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, আমাদের ক্রিকেট টিমের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য নিউজিল্যান্ড সরকারকে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট আয়োজনের সময় নিরাপত্তার বিষয়গুলোর জন্য কী কী বিষয় আলোচনা হয়, তা ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান আমাদের বলেছেন। তবে এ ঘটনার পর নিরাপত্তা ইস্যুতে আরও সতর্ক হতে হবে। ঘটনার পরপরই হাইকমিশন থেকে নিউজিল্যান্ড সরকারকে বার্তা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা চিন্তিত।
এ ব্যাপারে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাদের অভ্যন্তরীণ নিয়মকানুনগুলোও তারা পুনর্বিবেচনা করবেন। শাহরিয়ার আলম বলেন, আশা করি এ ঘটনার মধ্য দিয়ে নিউজিল্যান্ড শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং ভবিষ্যতে সতর্ক হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, ২০০৭-২০০৮ সালে (ওয়ান ইলেভেনের সময়) বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছিল, তা পুষিয়ে নিতে একটি বড় সময় ব্যয় হয়েছে। তিনি বলেন, ওই সময় প্রশাসন ও সুশীলসমাজ একটু সচেতন হলে ক্ষতিটা অনেকটাই কমানো যেত।
তিনি বলেন, সেই সময়ের মানুষগুলোর ব্যর্থতা জাতি হিসেবে আমাদের এখনও চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এরই মধ্যে ক্ষতির অনেকখানি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের সামরিক সক্ষমতার বড় একটি অংশে আমরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করেছি। তবে রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে সে দেশের ঋণের একটি অংশ আমরা ব্যয় করেছি। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, পাশাপাশি শান্তি রক্ষা মিশনে বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এটি অনেক বেশি সম্মান ও মর্যাদার।
আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীদের দেখভালের দায়িত্ব আমাদের রয়েছে। এজন্য সরকারের আলাদা একটি মন্ত্রণালয় করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রবাসীদের সব ধরনের সেবা দেয়া হয়।
শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের পাঠাতে না পারার জন্য সামরিক শক্তির দুর্বলতার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সামরিক শক্তির দিক থেকে পৃথিবীর প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দেশগুলোও দুই-তিন হাজার শরণার্থী ফেরত পাঠাতে পেরেছে এমন রেকর্ড নেই।
তিনি বলেন, কয়েক বছরে দেশের সামরিক খাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ক‚টনৈতিক খাতে বিনিয়োগ হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বৈদেশিক অনুদান কমাতে চাই। কারণ মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে হলে অনুদান নেয়া উচিত নয়। আমরা বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করছি। সেক্ষেত্রে কীভাবে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধাসহ অন্যসব সুবিধা নেয়া যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে বড় ধরনের বাণিজ্য সুবিধা রয়েছে। আর এ সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবদান রয়েছে। দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। বাংলাদেশে স্যামসাংয়ের মোবাইল ফোন সেট তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের হাত-পা বেঁধে কোনো দেশ বিশেষ সুবিধা আদায় করবে, ওই অবস্থা এখন আর নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখনও কোনো দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্যে যেতে পারেনি। তবে এটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার কাজ করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন