খবর শুনেই অজ্ঞান সদ্য বিয়ে করা এরশাদের স্ত্রী
সৌদি আরবে নিহত প্রবাসীদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তাদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠেছে আকাশ বাতাস।
সৌদি আরবে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে দাম্মাম ও আলজুব আরা শহরের মাঝামাঝি স্থানে দুটি প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়। এদের মধ্যে গোয়ালন্দ এলাকার দুজন আপন ভাইও রয়েছে।
নিহতরা হচ্ছেন- গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের পূর্ব উজানচর দরাপের ডাঙ্গী এলাকার ওহেদ বেপারীর ছেলে এরশাদ বেপারী (২৮) ও হুমায়ন বেপারী (২৩), দক্ষিণ নাছের মাতব্বর পাড়ার ওসমান খানের ছেলে কোব্বাত খান (২৩) ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চর দৌলতদিয়া আনছার মাতব্বর পাড়ার ছাহের মন্ডলের ছেলে মিরাজ মন্ডল (২২)।
অপর দুইজন হচ্ছেন- ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের আরান দেওয়ান ডাঙ্গীর আরান দেওয়ানের ছেলে ইদ্রিস দেওয়ান (৩২) ও সদরপুর উপজেলার হাজীগঞ্জ এলাকার শহীদ।
বাংলাদেশে স্বজনরা স্থানীয় সময় শনিবার দুর্ঘটনার খবর জানতে পারেন। এরপর থেকেই কান্নার রোল ওঠেছে নিহতদের বাড়িতে।
নিহত এরশাদ মাত্র ৬ মাস আগেই বিয়ে করে সৌদিতে গেছেন। কিছুক্ষণ পরপরই মুর্ছা যাচ্ছেন তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী।
শনিবার সরেজমিন পূর্ব উজানচরের নিহত দুই ভাই এরশাদ ও হুমায়নদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের লোকজন ও আত্মীয় স্বজনদের আহাজারীতে পুরো পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠেছে।
এ সময় দুই সন্তান হারানো ওহেদ বেপারী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সৌদীতে কর্মরত এলাকার অন্যান্যদের কাছ থেকে তারা এ দুর্ঘটনার খবর জানতে পারেন। পরে তাদের ফেসবুকের মাধ্যমের দুর্ঘটনার বিষয়টি আরো নিশ্চিত হন।
তিনি জানান, তার বড় ছেলে বিগত নয় বছর ধরে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে থেকে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতো। গত বছর ডিসেম্বর মাসে দেশে এসে বিয়ে করে। দুই মাস পর সে ফিরে গিয়ে ছোট হুমায়নের জন্য ভিসা পাঠিয়ে ওকেও নিয়ে যায়।
তিনি বুক চাপড়ে বলতে থাকেন, ‘এতো বড় শোক আমি কিভাবে সহ্য করবো।’
এ সময় এরশাদের স্ত্রী শিউলী আক্তার ও বৃদ্ধ মা কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
নিহত কোব্বাত খাঁর পিতা ওসমান খা জানান, তার ছেলেকে প্রথমে লিবিয়া পাঠিয়েছিলেন। সেখানে প্রতারিত হয়ে ছেলে দেশে ফিরে আসে। এরপর ৮/৯ মাস পূর্বে ধার-দেনা করে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে পাঠান। ছেলে এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার টাকা পঠিয়েছে। টাকাগুলো পাওনারদের পরিশোধ করেছি। এখনো ৭ লাখ টাকার উপর দেনা আছি। এ অবস্থায় আমার দেনাও পরিশোধ হলো না। ছেলেকেও হারালাম। তার আহাজারিতে উপস্থিত শত শত মানুষের চোখে জল চলে আসে।
মিরাজের বাবা ছাহের মন্ডল জানান, আট মাস পূর্বে বহু ধার দেনা করে ছেলেকে সৌদি পাঠিয়েছিলাম। আশা ছিল ও ঠিকমতো আয় রোজগার করতে পারলে ধীরে ধীরে ধার দেনা পরিশোধ করে দেব। সংসারেও স্বচ্ছলতা আসবে। কিন্তু আমার সব শেষ হয়ে গেল। সূত্র : যুগান্তর অনলাইন
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন