খাগড়াছড়িতে কোরবানি পশুর হাট জমে উঠেছে, পাহাড়ের গরু সমতলেও চাহিদা বেড়েছে

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে কোরবানি পশুর হাট জমে উঠেছে, পাহাড়ের গরু সমতলেও চাহিদা বেড়েছে চলছে। ৯টি সব কোরবানি পশুর হাট জমে উঠেছে। তবে পাহাড়ে চেয়েও সমতলের ক্রেতার সমাগম বেশি লক্ষ্য করা গিয়েছে বাজারে। উপজেলার পশুর হাট তুলনায় সাধারণত মূল জেলা বাজার হিসেবে সমৃদ্ধ।

এ বাজারে ৯টি উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে গরু বিক্রেতাদের সমাগম ঘটে। পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা এ বাজারে আসায় আসন্ন কোরবানি পশুর হাট জমে। তবে গরু ব্যাপারীদের মতে বৃষ্টির কারণে এখনো অনেক বাইরের ক্রেতা খাগড়াছড়িতে আসতে পারেনি। তারা আসলে হয়তো আমাদের পশুর হাট আরও জমজমাট থাকতো বলে আশা তাঁদের।

তবে ঈদের দিন ঘনিয়ে এলেও খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট কেন্দ্র মূল বাজারে গৃহস্থলী যার যার পালিত গরু নিয়ে এসেছে তারা নায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেকে গরু এখনো বিক্রি করছেন না। অপর দিকে অনেক ক্রেতা গরু দেখতে এসে কোরবানির জন্য গরু নিয়ে যাচ্ছে গরুর নিজেদের স্বাদ্যের মধ্যে হওয়ায়।
খাগড়াছড়ি গরু বিক্রি করতে আসা অংচাই মারমা জানান, গরুটি আমার ঘরের যত্নে পালিত গরু।

পাহড়ি ঘাস লতাপাতা ভুসি ছাড়া আমি কিছুই খাওয়ায়নি। এই ভাইটি নাকি চট্টগ্রাম থেকে এসেছে গরু কিনতে তাই ৫৫হাজার টাকায় আমি গরুটি বিক্রি করলাম আজকে। আমিও খুশি একসঙ্গে এতগুলো টাকা এক সঙ্গে পাওয়ায়।

মহালছড়ি উপজেলা থেকে আসা খামারী ওবাইদ হক বলেন, এবারে কোরবানি ঈদের উদ্দেশ্যে ৬টি গরু বড় করেছে এবং সেগুলো বাজারে বিক্রি করতে এসেছি। একটি বিক্রি করেছি। গরুর বর্তমানে খাদ্যের তুলনায় দাম কম হওয়ায় ছাড়ছি না। বাইরে থেকে যে কয়েকজন ক্রেতা এসেছে, তাদের বড় গরুর চেয়ে ছোট গরুর দিকে জোক বেশি।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহর থেকে আসা ক্রেতা নওশাদ হুদা সুজন জানান, খাগড়াছড়ি গরুর হাটে গরু কিনতে এসেছি। কারণ পাহাড়ের গরু পাহাড় প্রাকৃতিক খাদ্য ঘাস লতাপাতা খাইয়ে থাকে বেশিরভাগে, মোটাতাজা করা কম হয়। পাহাড়ের গরুকে কোন প্রকার মোটা তাজা করনে ওষুধ খাওয়ানো হয়না বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এবং শতভাগ হালাল বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাই এতদূরে থেকে আশার একটি কারণ হচেছ কুরবানীর জন্য সুস্থ সবল একটি পশু আমরা এবার ঈদে কোরবানি দিবো।

খাগড়াছড়ি পশুর হাটের ইজারাদার প্রতিনিধি মো: কামাল উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর এ সময় হাটে ৩থেকে ৪হাজার গরু উঠত। তবে বৃষ্টির কারণে তুলনামূলক কম গরু উঠেছে। তবে বাইরের ক্রেতাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা ক্রেতা গরু প্রতি প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী হাসিল নিচ্ছি। ক্রেতাদের সাধ্যমত অনুযায়ী।

পাশাপাশি আমাদের স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, ব্যাংক কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন যাতে বাজারে কোন প্রকার অসুস্থ গরু, মলম পার্টি, ক্রেতা বা বিক্রেতারা হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে তাদের তীক্ষ্ণ নজরদারির মাধ্যমে আমাদের সহায়তা করে যাচ্ছে।

গরু বাজার ইজারাদার মো: জামাল হোসেন জানিয়েছেন, কোরবানির হাট জমে উঠেছে। চাহিদা থাকায় দেশের সমতল অঞ্চলেও খাগড়াছড়ির গরু যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশুর হাট-বাজারগুলোতে দাম আরও বাড়বে, লাভবান হবেন এমন প্রত্যাশা করছেন খামারি ও বাজার ইজারাদাররা।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে খাগড়াছড়িতে জমজমাট হয়ে উঠেছে পশুর হাটবাজার। জেলার ৯টি উপজেলা ২৬টি কোরবানির পশুর হাটে পুরোদমে চলছে বেচাকেনা। হাটে রয়েছে পর্যাপ্ত দেশি গরু, মহিষ ও ছাগল। ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে উঠেছে হাটবাজারগুলো।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৩হাজার ছোট-বড় খামারির কাছে কোরবানি উপযোগী ১৯হাজারের বেশি পশু রয়েছে। তবে হাটবাজার গুলোতে পশুর দাম নিয়ে রয়েছে ভিন্ন চিত্র খামারিরা বলছেন তারা দাম পাচ্ছেন না, আবার ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি। এর পরও বাস্তবতার নিরিখে সবাই মোটামুটি খুশি।

খাগড়াছড়িতে ছোট আকারের গরু ৫০ থেকে ৬০হাজার, মাঝারি আকারের গরু ৬০ থেকে ৮০হাজার এবং বড় গরু ৩ থেকে ৬লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃত্রিম কোনো ওষুধ ব্যবহার না করে এখানে প্রাকৃতিকভাবে গরু পালন করা হয় বলে সমতল জেলাগুলোর তুলনায় খাগড়াছড়ির গরুর বাড়তি আকর্ষণ রয়েছে।

এ কারণে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ীর আগমন ঘটে খাগড়াছড়িতে। তবে এবার সমতলের ব্যবসায়ীরা তেমন আসেনি। চলতি বছর জেলার ৯টি উপজেলায় ১৯হাজার ১৬০টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুুত করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ১২হাজার ৮১০টি, মহিষ ১৫টি, ছাগল ৬হাজার ১১০টি এবং ভেড়া ৮০টি।

আসন্ন কোরবানিতে জেলার চাহিদা মেটানোর পরেও প্রায় ১হাজার ১৬০টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। পাহাড়ে প্রাকৃতিক খাবারের উপর নিভরশীল এসব পশু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হচ্ছে।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুপর্ণা দে জানান, আসন্ন কোরবানকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে অস্থায়ীভাবে ২৬টি হাট বসেছে।

এই ২৬টি হাটে ভেটেরিনারি ১৮টি টিম কাজ করছে। জেলাতে মোট পশু খামারীর ২হাজার ৫শ ৫৮টি। মোট গরুর সংখ্যা ১৯হাজার ১শ ১০টি। খাগড়াছড়ির কোরবানি যোগ্য গরু চাহিদা ১৮হাজার।

যেহেতু হাজারে অধিক উদ্বৃত্ত আছে, সেহেতু পাহাড়ের চাহিদা মিটিয়ে কোরবানি পশু চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে এবারো। সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলের গরু গুলো প্রাকৃতিক উপায়ে পালিত হয়। গরু গুলোকে কোনো মোটাতাজা করণ ঔষধ খাওয়ানো হয় না। তাই স্বাস্থ্য সম্মত।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ময়নুল ইসলাম জানান, জেলার খামারিরা প্রাকৃতিকভাবে গরু হৃষ্টপুষ্ট করেন, কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাবার ছাড়া কোনো প্রকার বিষাক্ত জিনিস ব্যবহার করেন না। প্রতিটি হাটেই মেডিকেল টিম রয়েছে যাতে কেউ অসুস্থ গরু বিক্রি করতে না পারে। নিরাপদ গবাদিপশু পালনের মাধ্যমে খামারিরা মাংস উৎপাদনে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। জেলায় ৩হাজারেরও বেশি খামারি রয়েছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদের নিয়মিত পরামর্শ ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। খাগড়াছড়ি জেলায় আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির জন্য ১৮হাজার পশুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু জেলার খামারগুলোতে স্থানীয় চাহিদার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুুত রয়েছে। এসব পশু ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী জেলায় সরবরাহের প্রস্তুুতি নিচ্ছেন খামারিরা।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল পুলিশ, আসন্ন কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন জায়গায় পশুর হাট জমে উঠেছে ইতিমধ্যে। যাতে কোন ক্রেতা বা বিক্রেতা উভয়ে কোনো প্রকার প্রতারণা শিকার না হয় আমাদের পুলিশ প্রশাসনের টিম নিযুক্ত রয়েছে। কোরবানির পশুর হাটকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

কোরবানির পশুবাহী ট্রাকসহ বিক্রেতাদের যাতে চাঁদাবাজি ও হয়রানির শিকার না হতে হয়, সেজন্য পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে। ব্যবসায়ীরা চাইলে অতিরিক্ত নিরাপত্তাও দিতে প্রস্তুুত পুলিশ এমনটিই জানিয়েছেন তিনি।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, জেলার ২৬টি কোরবানির হাটে কাজ করছে। জেলায় আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম, ব্যাংক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত আছে।

এছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি) ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরুর চোরাচালান রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ১৮হাজার।

এ কারণে এবার কোরবানির পশুর হাটে পশুর ভালো দাম পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী স্থানীয় খামারি ও পশু ব্যবসায়ীরা।

উল্লেখ্য, ৯টি উপজেলাতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দেশি গরু, মহিষ, ছাগলে সয়লাব জেলার হাটবাজারগুলো। পাহাড়ে সবুজ ঘাসে প্রাকৃতিক উপায়ে কোরবানির পশু মোটা তাজা করণ করছেন খামারিরা। এসব গবাদিপশু মোটা তাজা করণে ব্যবহার করা হচ্ছে না কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধ। ফলে পাহাড়ের খামারে বেড়ে ওঠা গরুর কদরও বেশি।

কোরবানিকে ঘিরে জেলার ছোট-বড় প্রায় ৩হাজার খামারির কাছে ১৯হাজার ১৬০টিরও বেশি পশু মজুত রয়েছে। বৃহস্পতিবার ও শনিবার হাট বাজারের ৬০থেকে ৮০হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে পছন্দনীয় গরু। এতে করে কোরবানির পশুর হাটে খামারি, ক্রেতা, বিক্রেতা ও ব্যবসায়ী সবার মাঝেই সন্তুষ্টি বিরাজ করছে।