খাগড়াছড়িতে সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখল চেষ্টার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখল চেষ্টার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ করেছে। এতে মাইসছড়িতে নারীদের প্রতিরোধে ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ১নং খাগড়াছড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়াডের রমেশ কার্বারী পাড়া ও থলিপাড়া শ্মশান এলাকায় সেটলার বাঙালি কর্তৃক ভূমি বেদখল চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।

শনিবার(২৯শে জুলাই ২০২৩) বেলা ২টার সময় ১নং খাগড়াছড়ি ইউপি এলাকাবাসী এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিনা চাঁন ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন তংগ্য কার্বারী ও যুব সমাজের প্রতিনিধি প্রদীপ ত্রিপুরা।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, গতকাল শুক্রবার(২৮শে জুলাই ২০২৩) রমেশ কার্বারী পাড়া ও থলি পাড়া শ্মশান এলাকায় স্থানীয় পাহাড়িরা নিজেদের জায়গায় ঘর নির্মাণ করতে গেলে একই ইউনিয়নের নতুন পাড়ার বাসিন্দা সেটলার মো: কাশেম একদল সেনা সদস্যকে সাথে নিয়ে পাহাড়িদের ঘর নির্মাণে বাধা দেয় এবং ঐ জায়গাটি তার বলে দাবি করে।

তারা বলেন, আমরা বংশপরম্পরায় উক্ত জায়গাটি ভোগদখল করে আসছি। উক্ত শ্মশানে আমরা যুগ যুগ ধরে মৃতদেহ সৎকার করে আসছি। কিন্তু ওই জায়গাটি কিভাবে বহিরাগত একজন বাঙালি নিজের বলে দাবি করতে পারে? সেনাবাহিনী কেন পাহাড়িদের ভোগদখলীয় জায়গা ও শ্মশান বেদখলে সেটলার বাঙালিদের সহযোগিতা দিচ্ছে?

বক্তারা উক্ত জায়গাটি বেদখলের চেষ্টা না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা আমাদের বংশপরম্পরায় ভোগদখলীয় জায়গা কোনভাবেই বেদখল করতে দেবো না। জীবন দিয়ে হলেও আমাদের ভূমি আমরা রক্ষা করবো।

এদিকে মো: আব্দুল লতিফ সেনা সদস্যদের সাথে নিয়ে ভূমি বেদখল করতে গেলে পাহাড়ি নারীরা নিজেদের ভূমি রক্ষায় শক্তভাবে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ করে। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়িতে পাহাড়ি নারীদের প্রতিরোধে ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।
জানা যায়, গতকাল শুক্রবার(২১শে জুলাই ২০২৩) বেলা ২টার দিকে মো: আব্দুল লতিফ নামে একজন সেটলার জয়সেন পাড়ায় নির্মিত নতুন সেনা ক্যাম্প থেকে ৩০জনের মতো একদল সেনা সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে বদানালা গ্রামে যায়।

আব্দুল লতিফের বাড়ি বর্তমানে লেমুছড়ি। তার পিতার নাম কাশেম মন্ডল। তার উদ্দেশ্য ছিল সেনা সদস্যদের দিয়ে কযেক মাস আগে পুরোন বাড়ি নুতন করে তোলা বা মেরামত করা পাহাড়িদের কয়েকটি বাড়ি ভেঙে দেয়া।
কিন্তু পাহাড়ি নারীদের শক্ত অবস্থান দেখে তার সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। সেনা সদস্যরা বাড়িগুলো ভেঙে না দিয়ে বাড়ির মালিকদের বদানালা দোকানে যেতে বলে। সে সময় তাদের সাথে বদানালা গ্রামের কার্বারী অনন্ত বিকাশ চাকমা ও ৪নং মাইসছড়ি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার গুণসিন্ধু চাকমাও ছিলেন।

সেনারা বাড়িগুলো কবে নির্মাণ করা হযেছে জানতে চাইলে নারীরা বলেন তারা সেখানে বহু বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। এরপর সেনা সদস্যরা আর কোন কথা বলেননি।

গ্রামের নারীদের সকল ক্ষোভ গিযে পড়ে সেটেলার আব্দুল লতিফের ওপর। তারা তাকে পাহাড়িদের জমির দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে না তাকাতে সতর্ক করে দিযে বলেন, ‘আমরা আমাদের জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করলে এতে আপনার মাথা ব্যথা কেন?’ তারা তাকে আর আর্মি পুলিশ নিয়ে সেদিকে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।
উল্লেখ্য, মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়িতে সেটেলাররা সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রায় সময় পাহাড়িদের জমি জোরপূর্বক দখল করে থাকে। ইতিপূর্বে ভূমি বেদখলের উদ্দেশ্যে পাহাড়ি বসতিতে হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের বহু ঘটনা ঘটেছে।

এতে নিজেদের ভূমি রক্ষায় পাহাড়ি নারীরা অবস্থান নিয়েছেন। পাহাড়িরা যাতে ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে তার জন্য সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জনমনে সব সময় ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে রাখে। এমনকি তারা তাদের মদদপুষ্ট ঠ্যাঙারে বাহিনীদের দিয়ে ভূমি মালিকদের হুমকি দিয়ে থাকে।

এতকিছুর পরও পাহাড়ি নারীরা নিজেদের জমি রক্ষার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। তারা সেনা-সেটেলারদের অন্যায় জুলুম আর সহ্য করতে রাজী নয়।
গতকাল প্রতিরোধকারী একজন নারী এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা আর চুপ করে থাকবো না। আমাদের পিঠ বহু আগে দেয়ালে ঠেকে গেছে। পেছনে যাওয়ার আর কোন রাস্তা নেই। বাঁচতে হলে প্রতিরোধ করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।

তিনি এলাকার হেডম্যান, জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বীদের সমালোচনা করে বলেন, তারা ঠিক থাকলে আমাদের এত কষ্ট হতো না। সেটেলাররাও ইচ্ছেমত ভূমি বেদখল ও আমাদের ওপর হামলা করতে পারতো না।
“মুরুব্বীরা ভীরু কাপুরুষ হয়ে আছে। সত্য কথাও তারা বলতে ভয় পায়। অনেকে গোপনে টাকা খেয়ে সেটেলারদের পক্ষ নেয বলেও ধারণা করা হয়।” তিনি এদেরকেও শায়েস্তা করা দরকার বলে মন্তব্য করেন।