খাগড়াছড়িতে গৃহবধুকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে, সদরে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ঝাড়ু মিছিল
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ভাইবোনছড়া দেওয়ান পাড়ায় নব্য মুখোশ সদস্য কর্তৃক গৃহবধুকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে সদরে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ঝাড়ু মিছিল করেছে। জেলার দেওয়ান পাড়ায় সেনা আশ্রিত নব্য মুখোশ সাধু, জেকসন ও পিন্টু গং কর্তৃক এক পাহাড়ি গৃহবধুকে গণধর্ষণ ও মৃত্যুর হুমকির প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টাস্তমূলক শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়ি উপজেলা সদরে ঝাড়ু মিছিল করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন(এইচডবিøউএফ) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।
মঙ্গলবার(৫ই জুলাই ২০২২) সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজার থেকে ঝাড়ু মিছিলটি শুরু করা হয়। মিছিলটি জেলা পরিষদ, নারাঙহিয়া ও উপজেলা পরিষদ হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার পর্যন্ত যায়। পরে সেখান থেকে মিছিলটি পূনরায় স্বনির্ভরে এসে সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমার সভাপতিত্বে ও সদস্য রিমি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সহ-সভাপতি লিটন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সাধারন সম্পাদক শান্ত চাকমা প্রমুখ। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য নারী সংঘের সাধারন সম্পাদক পরিনীতা চাকমা।
বক্তারা বলেন, শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের অস্তিত্বকে ধ্বংস করার জন্য দালাল-সুবিধাবাদীদের দিয়ে বিভিন্ন দল গঠন করে এক অরাজকতা সৃষ্টি করছে। সেনাবাহিনীর বেষ্টনির মধ্যেও একজন নারী কিভাবে গণধর্ষণের শিকার হয়? তারা বলেন, পাহাড়ি নারীরা আগে সেনা-সেটলার কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার হতো। কিন্তু এখন সেনাসৃষ্ট নব্য মুখোশ কর্তৃকও এমন ঘটনা ঘটছে। তারা পাহাড়ে অধিকারের কথা বলে মিথ্যার বুলি আওড়িয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করে ব্যাক্তিস্বার্থে নিয়োজিত থেকে প্রতিনিয়ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাচ্ছে। খাগড়াছড়ির দেওয়ান পাড়ার ঘটনাই তার প্রমান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা বলেন, পাহাড়ের মানুষ একসময় ধর্ষণ শব্দের সাথে পরিচয় ছিলো না। পাহাড়ে অবৈধ সেটলার অনুপ্রবেশের পরপরই ধর্ষণ অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। দুষ্কৃতিকারীরা দুস্কর্ম করার পরও উপযুক্ত সাজা না হওয়া এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি জারী থাকার কারণে পাহাড় অশান্ত হয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে গড়া গণতান্ত্রিক নামধারী মুখোশ সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর এই ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়নের জন্য গণবিরোধী কাজ করতে লজ্জাবোধ করছে না।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা সহ-সভাপতি লিটন চাকমা বলেন, শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সংগঠন সৃষ্টি করে পাাহাড়ে সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধান না করে সশস্ত্র সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যার কালিমা বাংলাদেশের ভুখন্ডকেই কলুষিত করবে। একচেটিয়াভাবে সামরিক শাসন কোন দেশেই সুফল বয়ে আনেনি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকেও সামরিক শাসন দ্বারা সমাধানের চেষ্টা করা হলে উদ্ভু পরিস্থিতির দায়ভার রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক শান্ত চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে সেনাশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট রেখে সকল ধরনের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে দমানোর জন্য গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সেনা-পুলিশ ও সেটলার হামলা বেশ লক্ষনীয়। এরকম ন্যাক্কারজনক হামলার পর সেনাবাহিনী যখন নিন্দিত হন ঠিক সেই মুহুর্তে তারা তাদের প্রত্যক্ষ মদদে মুখোশ বাহিনী গঠন করে দিয়ে ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সশস্ত্র হামলা করছে। ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি তাদের শাসনকে স্হায়িত্ব করার জন্য রক্ষীবাহিনী ও র্যাব সৃষ্টি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে প্রতিনিয়ত খুন-গুম-ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে জনজীবন অতীষ্ট করে তুলেছিল। ঠিক একি ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামেও সেনারা মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করে জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
সভাপতির বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশনে খাগড়াছড়ি জেলার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা বলেন, জনজীবন অতীষ্টকারী মুখোশদের অত্যাচারে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। হুমকি, ভয় ও নিপীড়ন করে অতীতে দালালরা যেভাবে জনরোষের মুখে নিজেদের গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছিল ঠিক সেভাবেই এ নব্যমুখোশদেরও নারীসমাজের উত্থান তথা জনশক্তির উত্থাানের সম্মুখীন হতে হবে।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে ধর্ষণকারী মুখোশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এবং ধর্ষকদের গ্রেফতার ও সাজা না হলে আগামীতে আরো জোরালো কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষনা দেন।
বক্তারা আজ সকালে মহালছড়ির মাইসছড়িতে সেটলার বাঙালি কর্তৃক হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে পাহাড়িদের ৩৭টি ঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে হামলাকারী সেটলারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক ভূমি বেদখল বন্ধের দাবি করেন।
উল্লেখ, গত ২৭শে জুন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের দেওয়ান পাড়ায় সেনা আশ্রিত নব্যমুখোশ সদস্য সাধু চাকমা, জেকসন চাকমা ও পিন্টু চাকমা কর্তৃক এক গৃহবধুকে পালাক্রমে ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন ও মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়। উক্ত ঘটনায় ভিকটিম খাগড়াছড়ি জেলা আদালতে মামলা দায়ের করলেও অভিযুক্তদের এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। হিল উইমেন্স ফেডারেশন’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখা সদস্য রিমি চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন