খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান, অন্যথায় জনগণ ক্ষমা করবে না : মির্জা ফখরুল
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে না পাঠালে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘খুব পরিষ্কার করে সরকারের কাছে বলতে চাই- আর বিলম্ব করবেন না। অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন এবং তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এ দেশের জনগণ আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না। আপনাদেরকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে এবং এই আন্দোলনই হবে এই সরকার পতনের শুরু।
শনিবার ছাত্রদলের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, অনেকে গুম হয়ে গেছে, অনেকে খুন হয়েছে, কারাগারে এখনও আমাদের ছাত্রনেতারা নির্যাতন ভোগ করছে। এ দেশকে মুক্ত করতে হলে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হলে আজকে যুবকদের জেগে উঠতে হবে, তরুণদের জেগে উঠতে হবে, ছাত্রদলকে জেগে উঠতে হবে। বাংলাদেশে সব বিজয় অর্জন হয়েছে ছাত্রদের নেতৃত্বে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আবার সেই ছাত্রদলকে জেগে উঠতে হবে, নেতৃত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবার জন্য আজকে সেই নেতৃত্ব দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার বিদেশে চিকিৎসায় পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। আমরা কি সবাই প্রস্তুত আছি, আছি আমরা প্রস্তুত? আন্দোলনে ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি?’
এই সময়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হাত উঁচু করে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দলে তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ আমরা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে সক্ষম হবো, তাকে বিদেশে পাঠাতে সক্ষম হবো।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে এই সমাবেশ হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার প্রতিকৃতি হাতে নিয়ে এই সমাবেশে অংশ নেন।
এই সমাবেশে ব্যাপক নেতাকর্মীর উপস্থিতির কারণে এই সড়কে একটা পর্যায়ে যানবাহন চালাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়াকে আপনারা বন্দি করে রেখেছেন। কারণটা কী? তাকে যদি বন্দি করে রাখা যায়, তাকে যদি অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো না যায়, তিনি যদি জীবন থেকে চলে যান, তাহলে আপনাদের (আওয়ামী লীগ) পথের কাটা দূর হবে।’
‘আমি তাদেরকে বলতে চাই- তা হবে না। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে তারা ভেবেছিলেন যে, বোধহয় শেষ হয়ে গেল বিএনপি, শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জায়গা। তা হয়নি। ঠিক একইভাবে বলতে চাই- দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সঠিকভাবেই তিনি তার উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে এবং তারই নেতৃত্বে এই দল এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক, আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি আছেন বলেই এখনও গণতন্ত্রের সংগ্রাম চলছে, তিনি আছেন বলেই এখনও আমাদের শত্রুরা আমাদের সীমান্তে তারা ভয় পায়।’
‘এখনও আওয়ামী লীগ যে আছে ওই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বেঁচে আছেন বলেই। তা না হলে আওয়ামী লীগ থাকবে না। এ দেশের যদি গণতন্ত্রকে ঠিক রাখতে চাই, যদি সত্যিকার অর্থেই সুশাসন চালু রাখতে চাই, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করে জনগণের সমস্ত অধিকার যদি ফিরিয়ে আনতে চাই, তাহলে অবশ্যই দেশনেত্রীকে এই রাজনীতিতে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে, আমাদের তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেত্রী তিনি বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে জীবনে কখনও পরাজিত হননি। তার জনপ্রিয়তাকে যারা ভয় পায়, এ দেশকে যারা করদ রাজ্যে পরিণত করতে চায়, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যারা বিকিয়ে দিতে চায়, সেই অপশক্তি, সেই তাবেদার শক্তি বেগম জিয়াকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। এই কথা মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্ট করতে বলতে চাই- যদি আপনারা এটা অস্বীকার করেন তাহলে প্রমাণ করুন। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দিন। প্রমাণ করুন স্বাধীনভাবে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন এবং তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। আপনি প্রমাণ করে দিন, আপনারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত নন। যদি তা না করেন, বাংলাদেশের মানুষ এটা বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে।’
নব্বইয়ের ডাকসুর ভিপি আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘যদি অনবিলম্বে দেশনেত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো না হয়, তাহলে এই অবৈধ ও ভোট ডাকাতির সরকার প্রধানকে সরানো জন্য বৃহত্তর কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এটাই আজকে ছাত্রদলের সমাবেশের আহ্বান বিএনপির নেতৃবৃন্দের কাছে।’
ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের পরিচালনায় সমাবেশে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, এবিএম মোশাররফ হোসেন, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম আলিম, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, আকরামুল হাসান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন