খুলনার উপকূলে আতঙ্ক কেটে স্বস্তির নিঃশ্বাস; বদলাতে শুরু করেছে ভাগ্য
উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চল কয়রা উপজেলার ষাটের দশকে নির্মিত বেড়িবাঁধের অধিকাংশ জায়গায় নদীর বাঁধ ভঙ্গুর ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। প্রতি বছর লোনা পানিতে প্লাবিতহতো উপজেলাটি। যে কোনো দুর্যোগ সংকেত কিংবা হালকা বাতাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে আবার প্লাবিত হওয়ার আতঙ্ক কাজ করত গোটা উপকূলীয় এলাকায়।
সরেজমিনে ঘুরে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘুর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসে কয়রা উপজেলার ২১টি স্থানে ২০ কিঃমিঃ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়। অনেকেই সব কিছু হারিয়ে বেড়িবাধের উপর আশ্রয় নিয়েছিল, আবার অনেকেই ছেড়েছে মাতৃভুমি। ষাটের দশকে নির্মিত ভঙ্গর বেড়িবাধ বার বার ভাঙ্গনের কারণে উপকূলবাসীর ভোগান্তি ও আতঙ্কের কথা চিন্তা করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি হিসেবে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খুলনার কয়রায় ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ এখন অধিকাংশ জায়গায় দৃশ্যমান, চওড়া ও প্রশস্ত। মাটির কাজ ও জিওব্যাগ (জিও টেক্স) দ্বারা অধিকাংশ জায়গায় কাজ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, জাইকা এবং জরুরি ভিত্তিতে সে কাজগুলো করা হয়েছে। কেটেছে উপকূলবাসীর আতঙ্ক। স্বস্তির নিঃশ্বাস এখন উপকূলজুড়ে। এখন বেড়িবাধ ভেঙ্গে সব কিছু হারানো মানুষের ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে। লবণ পানির আগ্রাসন থেকে বেঁচে স্বাভাবিক পরিবেশে আসতে পেরে এলাকায় চলছে ঈদ সম আনন্দ।
বেড়িবাঁধের ভাঙনের স্থায়ী সমাধানের জন্য এ অঞ্চলে মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। কয়রাবাসীর দীর্ঘ চাওয়া-পাওয়ার স্বপ্নও বাস্তবায়ন হতে চলেছে। লোনা পানির অভিশাপ থেকে কয়রাকে মুক্ত করতে নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য গত ২৩ নভেম্বর একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়রা উপজেলার পোল্ডার নং-১৪/১ টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য ১ হাজার ১৭২ কোটি টাকার বৃহৎ একটি প্রকল্প পাস করেন যা একটি প্রকল্প টেন্ডার হয়েছে। এটাসহ জাইকার অর্থায়নে ৩শ ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাধ নির্মিত হয়েছে। ষাটের দশকের ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ সংস্কার, চওড়া, প্রশস্তকরণ এখন দৃশ্যমান। উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের বৃহৎ প্রকল্প পাস হওয়ায় স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আনন্দে উচ্ছ্বাসিত তারা।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু সাঈদ খান বলেন, অসহায় মানুষের কান্নার আওয়াজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছলে মমতাময়ী মা কখনই কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। সিডর, আইলা, আম্ফান, ইয়াস, ফনি, বুলবুলের আঘাতে বিধ্বস্ত কয়রা-পাইকগাছার মানুষের কান্নায় ব্যথিত স্থানীয় সংসদ আক্তারুজ্জামান বাবু। তার নিরলস পরিশ্রমের অবিস্মরণীয় অর্জন ষাটের দশকের নির্মিত ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ সংস্কার করে দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করা ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দ ফলস্বরূপ।আমরা আজ বেড়িবাধ ভাঙ্গনের ঝুঁকি মুক্ত আছি । দীর্ঘ দিনের আতঙ্ক কেটেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কয়রা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান এসএম বাহারুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এ অঞ্চলে ব্রিটিশ আমলের ভঙ্গুর বেড়িবাঁধে কারণে প্রকৃতির বিরূপ আচরণের প্রথম ও প্রত্যক্ষ শিকার সব সময়েই। বিগত ১২ বছরে সিডর, আইলা, আম্ফান, ইয়াসে সুন্দরবন এবং ওই এলাকার মানুষ ও অন্যান্য প্রাণিসম্পদের ওপর দুর্বিষহ ও নেতিবাচক প্রভাব-প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আমাদের স্থানীয় সংসদ আক্তারুজ্জামান বাবু ভাইয়ের পরিশ্রমে ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ এখন দৃশ্যমান এবং চওড়া ও প্রশস্ত। উপকূলের মানুষ এখন দুর্যোগের হাত থেকে অনেকাংশে ঝুঁকিমুক্ত। এ অঞ্চলে প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবের হাত থেকে রক্ষাসহ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে শুরু করেছে।
সাতক্ষীরা ডিভিশন-২-এর সেকশন অফিসার সুমন আলী জানান,ষাটের দশকের নির্মিত বেড়িবাধে কয়রায় গত ৩ বছরে উপজেলার ১২০ কিঃমিঃ বেড়িবঁাধের মধ্যে প্রায় ৬০ কিলোমিটার ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ মাটি ও জিওব্যাগ দ্বারা সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে ঝুকিপূর্ণ বেড়িবঁাধেও কাজ চলমান আছে। টেকসই বেড়িবাঁধের পাস হওয়া মেগা প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেড়িবাঁধ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের প্রায় ৩২ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও পুনর্নিমাণ। পুরনো কিছু ব্লকের সংস্কারসহ মাটি, জিওব্যাগ দিয়ে নতুনভাবে নির্মাণ, বাঁধে ব্লক ডাম্পিং, ব্লক স্থাপন প্রক্রিয়া রয়েছে এ প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পটি টেন্ডার হয়েছে যা আগামী মাসের মাঝামাঝিতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে, যা ২০২৪ সালের শেষের দিকে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। হরিণখোলা গ্রামের আল আমিন ইসলাম বলেন, ঝড় বাতাসের শব্দ শুনলেই ভঙ্গুর বেড়িবঁাধের কারণে আমরা আতংকিত সহ নদী গর্ভে ভিটে মাটি হারানোর ভয়ে থাকতাম। বর্তমানে আমাদের বেড়িবঁাধ হওয়ায় আতংক কেটেছে। এখন আমরা খেয়ে-পরে স্বাভাবিক ভাবে জীবীকা নির্বাহ করতে পারছি। গোবরা গ্রামের ৬০ উর্ধ্ব বয়সের করিম চাচা এ প্রতিনিধিকে বলেন, ছোট কালে বেড়িবঁাধের কাজ দেখেছি, আর এখন আমাদের বর্তমান এমপি সাহেবের উদ্যোগে বেড়িবঁাধ হওয়ার কারনে আমাদের দূর্দশা কেটেছে। লোনা পানিতে প্রায় সময় ডুবে থাকা থেকে ও খাবার পানির সংকট থেকে মনে হয় রেহাই পেয়েছি। কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, গত কয়েক বছরে ষাটের দশকের নির্মিত বেড়িবঁাধে আমরা কাজ করতে দেখেছি। যা ইতো পূর্বে কয়েক দশকেও হয়নি। যা আশানুরুপ কয়রা উপজেলার বেড়িবঁাধ অনেকটা ঝুকিমুক্ত। তবে এখনও কিছু কিছু স্থানের বেড়িবঁাধ কিছুটা দুর্বল আছে। তবে সর্বপরি ঝড়ের সংকেত শুনলেই আগের মত আতংকে থাকতে হয় না এলাকাবাসীর। তবে দ্রুত মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবী জানান তিনি। উক্ত মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
তথ্যানুসন্ধানে ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়রা-পাইকগাছার গণমানুষের অভিভাবক আলহাজ্ব আকতারুজ্জামান বাবু কয়রা-পাইকগাছার বন্যাকবলিত লোনা পানির মানুষের দুর্দশার চিত্র বারবার জাতীয় সংসদে তুলে ধরেছেন। উপকূলের অবহেলিত জনসাধারনকে লোনা পানির ছোবল থেকে বাঁচাতে ছুটে বেড়িয়েছেন মন্ত্রণালয় থেকে সচিবালয় পর্যন্ত। বিধ্বস্ত উপকূলবাসীর হা-হুতাশ, হাহাকারের আর্তনাদ খুলনা শহরসহ রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মতবিনিময় সভা আয়োজনের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে তুলে ধরেছেন। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে এমপি বাবু জাতীয় পর্যায়ে জনমত গঠন করতে দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন, যার ফসল কয়রা উপজেলা বেড়িবাঁধ এখন ঝুঁকিমুক্ত ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের বৃহৎ প্রকল্প পাস হয়েছে।
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, উপকূলীয় অঞ্চল লোনা পানিতে ষাটের দশক হতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে বেড়িবঁাধের কাজ হওয়ায় ঝুকিমুক্ত আছে উপকূলের মানুষ। মানুষের ভোগান্তি ও অপরিমেয় ক্ষতি মমতাময়ী জননী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টিতে আনতে মিটিং, সিম্পোজিয়াম, সভা, সংবাদ সম্মেলনসহ জাতীয় সংসদে একাধিকবার উপস্থাপন করেছি। অবশেষে বঙ্গবন্ধুকন্যা উপকূলবাসীর আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ লোনা পানির অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ প্রকল্প উপহার দেন। যা ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়েছে। স্থায়ী বেড়িবাঁধের এ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু হবে। ফলে কয়রাবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ মুক্ত হবে লোনা পানির অভিশাপ থেকে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন