গরু মেরে জুতো দান করছে চীন-ভারত : ফখরুল

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও ভারতের ‘দ্বিচারিতা’র কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মিয়ানমারের নৃশংস গণহত্যা সমর্থন করে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ প্রদানকে ‘গরু মেরে জুতো দান’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। শুক্রবার বিকালে রাজধানী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে কী দেশে, কী পৃথিবীতে বাস করছি। যেখানে মানবতার, মনুষ্যত্বের কোনো মূল্য নেই। এখানে এখন শুধু ক্ষমতা আর অর্থনৈতিক স্বার্থই বড় হয়ে দাঁড়াল?’

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংস গণহত্যা ও নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কী কারণে আজ চীন-রাশিয়ার মতো দেশ মিয়ানমারকে সমর্থন দিচ্ছে? কী কারণে যে ভারত গণতন্ত্র, মানবাধিকারের জন্য বিশ্বে নন্দিত, তারা আজকে মিয়ারমারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আবার বলছে, আমরা তো ত্রাণ পাঠাচ্ছি। এটা হচ্ছে গরু মেরে জুতো দানের মতো অবস্থা।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না কী মানবেতর জীবন রোহিঙ্গারা যাপন করছে! কল্পনার বাইরে, মাথার ওপরে কোনো ছাদ নেই। ১০ দিনের শিশুকে বুকে নিয়ে একটি ছোট্ট প্লাস্টিকে ঢেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।’

‘বিশ্ব বিবেকের কাছে আবেদন জানাই, আপনারা এগিয়ে আসুন, মিয়ানমারকে বাধ্য করুন তাদের গণহত্যা বন্ধ করতে, তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে’ বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলেছি, আমাদের কেউ এসে কিছু করে দিয়ে যাবে না। আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি, প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে চীন, রাশিয়া ও ভারতে যাওয়া উচিত তাদের বোঝানোর জন্য। বলা উচিত, এটা আমাদের জন্য বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমার সরকার একটা জাতিকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কাজ করছে। আর আমরা চুপ করে বসে আছি।’

সরকার মিয়ানমারকে একটি শক্ত কথাও বলেনি অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত গণহত্যার জন্য মিয়ানমার সরকারকে দায়ী করেনি, নিন্দা পর্যন্ত জানায়নি। গণহত্যা কথাটিও বলেনি। এমনকি রোহিঙ্গাদের শরণার্থী বলতে তারা রাজি নয়। তারা মনে করে অনুপ্রবেশকারী। জানি না এর মধ্যে কী ডিপ্লোমেসি (কূটনীতি) আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ দুটি। একটা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ। আমাদের গণতন্ত্র নেই। মানুষ ভোট দিতে পারবে কি না, নাগরিকেরা তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি না, অর্থাৎ আমাদের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত।’

‘অন্যটি হচ্ছে, আমরা এখন বাইরের দ্বারা আক্রান্ত। এই দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা জাতীয় ঐক্য ছাড়া সম্ভব নয়। এটি মোকাবিলা করতে সব শ্রেণি-পেশাজীবীকে একাত্তরের মতো আবার এক হতে হবে’ যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন-জিসাসের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতা এমএ মান্নান, জয়নাল আবেদীন, সাংবাদিক নেতা আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।