গর্ভপাত করাতে গিয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্কুলছাত্রীকে হত্যা!
শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের মহিষকান্দি গ্রামে বৃদ্ধের ধর্ষণের শিকার অন্তঃসত্ত্বা স্কুলছাত্রীকে অবৈধ গর্ভপাতের সময় হত্যা করা হয়। পরে লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তাসলিমা আক্তার (১৩) উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মহিষকান্দি গ্রামের মো. ইউসুফ খাঁর মেয়ে। সে ৯৪নং চর মহিষকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।
পুলিশ, স্থানীয় ও নিহত পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের মৃত সাবুত আলী মাদবরের ছেলে নুর ইসলাম মাদবর (৬০) একই গ্রামের প্রতিবেশী স্কুলছাত্রী তাসলিমা আক্তারকে বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতেন। এক পর্যায়ে তাসলিমা ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে এ ঘটনা চাপা দিতে নুর ইসলাম মাদবর ও তার স্ত্রী আয়শা বেগম (৪০) মিলে ওই স্কুছাত্রীর অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর জন্য পরিবারকে বেড়ানোর কথা বলে সোমবার (১ জানুয়ারি) তাসলিমাকে নিয়ে যায়।
পরে বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাতে কুচাপট্রি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে আসে। স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মাজেদা বেগম (৫০) তাসলিমাকে গর্ভপাত ঘটানোর জন্য তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই দিন রাত ১০টার দিকে তার নিজ বাড়িতে মাজেদা বেগম অবৈধ গর্ভপাত করার সময় তাসলিমার মৃত্যু হয়। পরে মাজেদা বেগম ও তার ভাই আমিরুল আমির মিলে তাসলিমাকে গুম করা উদ্দেশ্যে ফের কুচাপট্রি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে আসে ।
মাজেদা ও আমিরুল তাসলিমাকে গুম করার জন্য স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পূর্বপাশে গর্ত করছিল। তখন ইউনিয়ন গ্রাম পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয়রা ঘটনা জানতে পারলে গোসাইরহাট থানা পুলিকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাসলিমার মরদেহ উদ্ধার করেন এবং কুচাপট্রি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মাজেদা বেগম ও তার ভাই আমিরুল আমিরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে তাসলিমা আক্তারের মরদেহ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ খবর লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান পুলিশ।
তাসলিমার বাবা মো. ইউসুফ খাঁ জানান, তার দুই ছেলে, চার মেয়ের মধ্যে তাসলিমা ছোট। তার মেয়ে তাসলিমাকে সোমবার (১ জানুয়ারি) আত্মীয়ের বাড়িতে এক দিন বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে যান প্রতিবেশী নুর ইসলাম মাদবর ও তার স্ত্রী আয়শা বেগম। একদিন পর মেয়ের খোঁজ নিয়ে দেখেন মেয়ে আসেনি। পরে বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাতে জানতে পারেন তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। তার মেয়ের হত্যার বিচার চান তিনি।
এদিকে অভিযুক্ত নুর হোসেন মাদবর পালিয়েছে তাকে পাওয়া যায়নি।
কুচাইপট্রি ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আলী আকবর বলেন, তারসলিমার লাশ গুম করা হচ্ছে ঘটনাটি শুনতে পাই। পরে ঘটমনাস্থল কুচাপট্রি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে যাই। তখন দেখি লাশ গুমের জন্য গর্ত খুড়া হচ্ছে। তাৎক্ষণিক ব্যাপারটি পুলিশকে জানাই।
কুচাইপট্রি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির স্বপন বলেন, আমি ঢাকা থেকে বিষয়টি জানতে পারি। পরে পুলিশকে খবর দেই। এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) থান্দার খায়রুল হাসান বলেন, বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে আমার কাছে কুচাইপট্রি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান ও স্থানীয়দের ফোন আসে। তারা ফোনে জানান, একটি লাশ গুম করার চেষ্টা চলছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি গোসাইরহাট থানার ওসিকে জানাই এবং পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই।
মরদেহটি প্লাষ্টিক, দুইটি লেপ মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করি। ঘটনাস্থল থেকে মাজেদা বেগম ও তার ভাই আমিরুল আমিরকে আটক করি। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।
তিনি আরো জানান, তাসলিমাকে প্রথমে ধর্ষণ করা হয়েছে। পরে সে গর্ভবতী হয়ে গেলে অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটানোর জন্য নিলে ওই স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। পরে তার লাশ গুমের চেষ্টা করা হয় ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন