গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি পানিবন্দি ৬৭ হাজার পরিবার, ৮০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ
উজানের ঢল এবং গেল সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে গাইবান্ধার সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের ৬৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা ও আমন বীজতলাসহ আড়াই হাজার হেক্টরের অধিক জমির ফসল। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, শনিবার (৬ জুলাই) বিকেল ৩টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া; ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে; জেলার করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও বিপৎসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর পানি ৩০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গাইবান্ধা সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জের ৯টি, সাঘাটার ৮টি এবং ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এই ২৯ ইউনিয়নে পানিবন্দি রয়েছে ৬৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার।
এরমধ্যে গাইবান্ধা সদরে ৩৯ হাজার ৮৮৯টি, সুন্দরগঞ্জ ৫২ হাজার, সাঘাটা ১৫ হাজার ১৫০টি ও ফুলছড়ি ৭৪ হাজার ৯০টি পরিবার পানিবন্দি। তবে স্থানীয়দের দাবি বাস্তবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আরো বেশি।
পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, ফুলছড়িতে ২৩টি, সদরে ২৪টি, সাদুল্লাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ৬টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে; বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে বন্যার পানি ওঠায় ইতোমধ্যে সদর উপজেলার ১৭টি, ফুলছড়িতে ১৪টি, সাঘাটায় ২১টি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১১টিসহ জেলার মোট ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।
এছাড়াও সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তিনটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ।
পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষ শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। প্রকট আকার ধারণ করেছে গো-খাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, চলমান বন্যায় চার উপজেলায় দুই হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজি পানিতে ডুবে গেছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষতি কম হবে। অন্যথায় ফসল পচে নষ্ট হয়ে যাবে।
গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল জানান, এ পর্যন্ত সদরসহ চার উপজেলার বন্যার্ত মানুষের মাঝে ৩০৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৬৫ মেট্রিক টন জিআর চাল (প্রাকৃতিক দুর্যোগ), ১০ লাখ টাকা জিআর ক্যাশ ৪টি উপজেলায় উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২৬৫ মেট্রিক টন জি আর চাল (প্রাকৃতিক দুর্যোগ) মজুদ রয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পিড বোট প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরো বলেন,পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা এবং উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম, কৃষি টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিম এবং লাইভস্টোক টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া একাধিক এনজিও বানবাসী মানুষের সেবায় কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন