‘গাজীপুরের মতো জাতীয় নির্বাচনেও বড় জয় পাবো’

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল আসতে শুরু করার পরই ওবায়দুল কাদের নিশ্চিত হয়ে যান তারা বড় ব্যবধানে জয় পাচ্ছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও এই ব্যবধানে জেতার প্রত্যাশা করছেন তিনি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট শেষে গণনা চলাকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এ সময় তিনি এ প্রত্যাশার কথা বলেন।

কাদের বলেন, ‘গাজীপুরে দুটি কেন্দ্রের ইভিএম-এর (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ফল এবং আরও কিছু কেন্দ্রের ফল দেখে বোঝা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হবেন।’

আওয়ামী লীগ গাজীপুরে বড় বিজয়ের আশা করছে জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন অর্জনের সোনালী ফসল এই বিজয়। এই ধারা জাতীয় নির্বাচনেও অব্যাহত থাকবে।’

জনগণ এখন উন্নয়ন, সাফল্য—এসব দেখে ভোট দেয় দাবি করে কাদের বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনতার আদর্শে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগকে আবারও জয়ী করবে।’

বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ

নির্বাচনে শতাধিক কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন কাদের। আর এই তথ্য সত্য নয় জানিয়ে বিএনপিকে তা প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জও দেন তিনি।

‘১০০টি কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগকে আমি চ্যালেঞ্জ করছি।…কোন কোন এজেন্টকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি তথ্যপ্রমাণ দিক।’

কাদের বলেন, ‘এখানে একটি ঘটনা ঘটেছে। সকালে সকালে ভোট শুরুর পর কিছু কিছু ভোটকেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টরা তাঁদের কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এ কারণে প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা ওই সব এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেননি। ১০০টি কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়ার তথ্যটি ঠিক নয়।’

‘বিএনপির ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও আশুলিয়ার কথিত যুবদল নেতা সাইফুল ইসলামের মধ্যে কথোপকথনের দুটি ওডিও রেকর্ড মিজানের মোবাইল ফোন থেকে জব্দ করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

মিজান নিজে আটক হয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। অডিও রেকর্ড অনুযায়ী সাইফুলকে মিজান বলছিলেন, আওয়ামী লীগের ব্যাচ পরে নাশকতার জন্য লোক প্রস্তুত করতে।

ওপরে ওপরে আওয়ামী লীগ সমর্থক আর ভেতরে ভেতরে বিএনপি করেন এমন লোক সংগ্রহের পরামর্শ দিয়ে মিজান জানান, কেন্দ্রে গিয়ে কী করতে হবে, সে ‘প্রশিক্ষণ’ ও ‘যন্ত্রপাতি’র পাশাপাশি টাকা পয়সাও দেবেন তিনি।

কাদের বলেন, ‘নির্বাচন বানচাল করতে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে বিএনপি বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং গণমাধ্যমে এ বিষয়ে একটি ফোনালাপ প্রকাশ হয়েছে।’

‘সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপির কিছু লোককে নৌকার ব্যাচ লাগিয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। …বিএনপির একজন কর্মী জাল ভোট দিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এটাকে কী বলবেন?’।

‘বিএনপি ছাড়া কারও অভিযোগ নেই’

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ছাড়া কেউ প্রশ্ন তোলেনি দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘সারা দিন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিয়েছে জনগণ।’ ‘নির্বাচন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপি তাদের ভাঙা রেকর্ড বাজাতে থাকে। অথচ এই নির্বাচনে সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কোথাও কোনো হতাহতের খবরও পাওয়া যায়নি। এসব দেখে বোঝা যায়, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে।’

জাল ভোটসহ নানা অনিয়মে নয়টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হওয়ার পেছনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের দ্বন্দ্বকে দায়ী করেন কাদের। বলেন, ‘এখানে অন্য কোনো বিষয় কাজ করেনি।’

ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ কথা রেখেছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের যেন কোনো বদনাম না হয়। নির্বাচনের ফল বিপক্ষে গেলেও মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার ছিল আওয়ামী লীগের।’

গাজীপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ কে এম এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।