গাড়ির যাবজ্জজীবন জেল জরিমানা!
ডাম্পিং স্টেশনগুলোকে বলা যায় গাড়ির জেলখানা। বেওয়ারিশ পরিবহন অর্থাৎ কাগজবিহীন পরিবহনের ক্ষেত্রে যাবজ্জজীবন জেল জরিমানা হয়। এতে গাড়ি এখানেই পচে মরে। মামলার আলামতের গাড়িরও ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও শ্যামপুর ডাম্পিং স্টেশনে জমে আছে কয়েক হাজার ছোট-বড় গাড়ি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডাম্পিং স্টেশনে গাড়ির এসব গাড়ির সংখ্যা। গাড়িগুলোয় মামলা থাকায় নিলামেও তোলা যাচ্ছে না।
বছরের পর বছর গাড়িগুলো এই জেলাখানায় পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ। সেই সঙ্গে গাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে দেশের সম্পদ।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদালত রায় না দেয়া পর্যন্ত এসব গাড়ির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের কোনো উপায় নেই। তাই নষ্ট বা চুরি হলেও এর কোনো দায়-দায়িত্ব তাদের নয়।
আগারগাঁও ডাম্পিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বড় গাড়ির চেয়ে ছোট গাড়ি রয়েছে অনেক বেশি। যার মধ্যে সিএনজি, মোটরসাইকেল, বাসের সংখ্যা হবে ৮০ থেকে ৯০টির মতো। সিএনজি রয়েছে এক থেকে দেড়শ’র মতো, আর মোটরসাইকেল হবে ১৫০ থেকে ২শ’র মতো।
জানতে চাইলে আগারগাঁও ডাম্পিং স্টেশনের দায়িত্বরত টিএসআই মো. আনিস বলেন, মামলার আলামত হিসেবে যে পরিবহন রয়েছে সেগুলো দীর্ঘ সময় এখানে আছে। বাকিগুলো সবুজ স্লিপ নিয়ে এলেই আমরা বুঝিয়ে দেই।
সবুজ স্লিপ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাম্পিং করার সময় লাল একটি রসিদে মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি কপি দেয়া হয়। পরে ট্রাফিক ডিসি অফিসে জরিমানার টাকা জমা করলে ফিরতি নীল রংয়ের কাগজ দেয়া হয়। সেটা আমাদের কাছে জমা হলেই আমরা গাড়ি বুঝিয়ে দেই। আমরা গাড়ির যাতে ক্ষতি না হয় সেটাও দায়িত্ব মনে করেই করি।
বিআরটিএ’র এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুজিত হালদার বলেন, পরিবহন ডাম্পিং স্টেশনে গেলে অবশ্যই আদালতে কাগজপত্র জমা দিয়ে গাড়ি নিতে হবে। কাগজের কারণে গাড়ি পেতে বিলম্ব হলে সেটা গাড়ির মালিকের ব্যর্থতা।
ট্রাফিক পুলিশের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট থেকে ২০১১ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে রাজধানীতে ১২ হাজার ৮৮টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ৫৮৩টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটক করে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পাঠানো হয়। এসব জরিমানা হিসেবে আদায় করা হয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৬৫ হাজার ৮০০ টাকা। ১৮৬ জন আসামিকে দেয়া হয়েছে কারাদণ্ড।প্রতি বছর এই সমীক্ষা বাড়ছে তবে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে নতুন কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
পরিবহন ডাম্পিং ও মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে পোস্তগোলা ব্রিজের শ্যামপুর প্রান্তে দায়িত্বরত সার্জেন্ট সাফায়েত বলেন, আমরা পারতপক্ষে ডাম্পিংয়ের পক্ষে না। রেকার বিল করে অনেকাংশে কাগজপত্র সংশোধন করার সুযোগ দেই। এছাড়া লোড পরিবহনের ক্ষেত্রেও মানবিক বিষয় আমরা দেখি। এছাড়া আমাদের অভিযানে ডাম্পিং কম হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ট্রাফিক) পূর্ববিভাগের অতি. উপ-কমিশনার সাইদুর ইসলাম বলেন, আইনি জটিলতার কারণে ডাম্পিং স্টেশনে গাড়ি দীর্ঘদিন থাকে এটা ঠিক। সেটা আইনি জটিলতা হতে পারে, সম্পদ রক্ষা হতে পারে। তবে এ ধরনের উদ্যোগ হলে সাধুবাদ জানাচ্ছি।
আগারগাঁও ডাম্পিং স্টেশনে ছোট-বড় মিলিয়ে চার শতাধিক গাড়ি জব্দ আছে। এর মধ্যে শ’খানেক গাড়ির মালিকদের তাদের গাড়ির ব্যাপারে কোনো খোঁজ নিতে দেখা যায়নি। বর্তমান বাজারদর অনুসারে এসব গাড়ির মূল্য কমপক্ষে ১০ কোটি টাকারও বেশি বলে ধারণা করছেন ডাম্পিং স্টেশনে কর্মরতরা।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও দয়াগঞ্জ ট্রাক স্টেশন এলাকায় বিভিন্ন পরিবহন মালিক, চালক, শ্রমিকদের সঙ্গে গাড়ি ফেরত না নেয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জানা যায়, অনেক মালিক নানা কারণে গাড়ি ফেরত নিতে চান না। যেমন কিছু গাড়ি এতো পুরনো যে ছাড়িয়ে নিতে যে খরচ তার চেয়ে বাতিলের তালিকায় ফেলাই ভালো। আবার কিছু রয়েছে চোরাই গাড়ি। সেগুলো ছাড়াতে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকে সস্তায় সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনেন, যেগুলোর বৈধ কাগজপত্র থাকে না। এরকম বিভিন্ন কারণে কিছু গাড়ির মালিক মামলা নিষ্পত্তির ব্যাপারে উদ্যোগী হন না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন