গৌরবের ৭১ বছরে ছাত্রলীগ

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি নাম। চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশমাতৃকার জন্য বিভিন্ন সময় ছিনিয়ে এনেছে বিজয়। শাসক শ্রেণির বুলেটকে উপেক্ষা করে ঐক্যবদ্ধ করেছে বাংলার ছাত্র সমাজকে। কঠিন লড়াই চালিয়েছে, স্বগৌরবে উড়িয়েছে বিজয়ের কেতন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর সময়ের প্রয়োজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এ সংগঠনের জন্ম। এরপর বাঙালি জাতির সকল অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে সংগঠনটি নেতৃত্ব দিয়েছে সামনের সারিতে থেকে।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা এ সংগঠনটি বর্তমান সময়ে দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে স্বল্প পরিসরে যাত্রা শুরু করা এর সংগঠনের বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় ‘১ কোটি’ বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে একে একে ৭০ বছর অতিবাহিত করেছে এ সংগঠন। জন্ম দিয়েছে অজস্র ইতিহাস। বাঙালি জাতিসত্তার সঙ্গে মিশে থেকে জাতির উত্থানের সব ইতিহাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, এরপর স্বৈরাচার এরশাদের পতন থেকে ১/১১ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কূটকৌশল এবং সেনাশাসন থেকে দেশকে রক্ষা করার মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন-সংগ্রাম রয়েছে তার সঙ্গে ছাত্রলীগের নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

আজ ৪ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার, দেশের সর্ব বৃহৎ এ সংগঠনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। পা রাখছে গৌরবের ৭১ বছরে। দিবসটি উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ছাত্রলীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনটির সব সাংগঠনিক কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৭টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটা। এছাড়া শুধুমাত্র ঢাকার মধ্যে অবস্থিত ইউনিটসমূহ ছাড়া দেশের অন্য সব ইউনিটের আনন্দ র‌্যালি, ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উদযাপন। ৬ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সংগঠনের আনন্দ র‌্যালি। ৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে দুঃস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ। ৯ জানুয়ারি স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। ১১ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ অঞ্চলের সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগ্রামের গর্বিত অংশীদার। নেতৃত্ব দিয়েছে সামনে থেকে, চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছে বিজয়। দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, ৫৪-এর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ৫৮-এর আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ৬-দফার পক্ষে গণঅংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তির সনদ হিসেবে এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাক শাসকদের পদত্যাগে বাধ্য এবং বন্দীদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা, ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ এবং ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য নেতাকর্মী সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করে লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

স্বাধীনতার পরও গণতন্ত্র যখনই হুমকির মুখে পড়েছে তখন এ সংগঠন আবির্ভূত হয়েছে ত্রাতার ভূমিকায়। ৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে ১/১১ এর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পতন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ছাত্রলীগের ভূমিকার কথা দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়া এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষনেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দীর্ঘ পথচলায় বাংলার মানুষের এবং ছাত্র সমাজের অধিকার আদায়ে কাজ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়েছি আমাদের ভাষা অধিকার এবং স্বাধীন বাংলাদেশ। এরপর গণতন্ত্র যখনই হুমকির মুখে পড়েছে তখনই ছাত্রলীগ আবির্ভূত হয়েছে ত্রাতার ভূমিকায়। এখন আমাদের লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করে যাওয়া। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়া।