চলচ্চিত্র পুরস্কারের সোনার মেডেলে মরিচা!
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, চিত্রগ্রাহক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানসহ আরও অনেককে সম্মাননার সময় দেওয়া সোনার মেডেলে মরিচা পড়েছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই গুণীর সোনার মেডেল দেখে এমনটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ওই দুই পরিবারের সদস্যরা আলাপকালে বলেন, এত যত্ন করে রাখার পরও সোনার মেডেলগুলো মরিচা পড়েছে! বিষয়টি তাঁদের কষ্ট দিয়েছে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে দশবার সেরা চিত্রগ্রাহকের সম্মাননা অর্জন করেছেন মাহফুজুর রহমান খান। এর মধ্যে পাঁচবার ট্রফি আর সনদ পেয়েছিলেন, শেষ পাঁচবার পেয়েছেন সোনার মেডেল। আলমারিতে থাকা এসব সোনার মেডেলের তিনটিতে মরিচা পড়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন গুণী এই চিত্রগ্রাহক। ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ ও ‘দহন’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন পরিচালক শেখ নিয়ামত আলী। এই পরিচালক ১৯৯৫ সালে ‘অন্য জীবন’ ছবি নির্মাণ করে একাই তিনটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ‘অন্য জীবন’ ছবির সময় অন্য পুরস্কারের সঙ্গে যুক্ত হয় সোনার মেডেল। প্রখ্যাত এই পরিচালক দেড় দশক আগে মারা যান। গুণী এই পরিচালকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ট্রফি ও মেডেল দেখভাল করছেন তাঁর মেয়ে শর্বরী ফাহমিদা। তিনি বলেন, ‘অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন, আমরা পুরস্কারগুলোর পরিচর্যা করি না। এত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নভাবে রাখার পরও কীভাবে সোনার মেডেলে মরিচা পড়ে! এর বেশি আর কিছু বলার নাই।’
১৯৮৪ সালে ‘অভিযান’ ছবির জন্য প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন মাহফুজুর রহমান খান। এরপর আরও নয়বার এই সম্মাননা অর্জন করেন গুণী এই চিত্রগ্রাহক। এর বাইরে অন্য যেসব ছবির জন্য মাহফুজুর রহমান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন সেসব ছবি হচ্ছে ‘সহযাত্রী (১৯৮৭)’, পোকামাকড়ের ঘরবসতি (১৯৯৬)’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯)’, ‘দুই দুয়ারি (২০০০)’, ‘হাজার বছর ধরে (২০০৫)’, ‘আমার আছে জ্বল (২০০৮)’, ‘বৃত্তের বাইরে (২০০৯)’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২)’ ও পদ্মপাতার জল (২০১৫)। প্রথম আলোর কাছে গুণী এই চিত্রগ্রাহক বলেন, ‘আমি পাঁচটি সোনার মেডেলে পেয়েছি। কদিন আগে দেখলাম, আমার আলমারিতে রাখা মেডেলগুলোতে মরিচা পড়েছে। এই দৃশ্য দেখার পর শুধু কষ্টই পেয়েছি। আমার একটা কথাই মনে হয়েছে, কীভাবে এমন একটা কাজ করতে পারল! এটা আমার দেশের, সরকারের জন্য লজ্জা।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ব্রোঞ্জের ট্রফি, সম্মাননা ও ক্রেস্টের পাশাপাশি ১৮ ক্যারেটের সোনার মেডেল দিয়ে আসছে সরকার। সোনার মেডেলের ওজন ১৫ গ্রাম থাকে বলে নিশ্চিত করেছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি জানালেন, এবারের সোনার মেডেলের ওজন ১৫ গ্রাম হলেও এটি ১৯ ক্যারেটের।
পুরো বিষয়টি নিয়ে তথ্যমন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র ও প্রশাসন) আজহারুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব মেডেল পুরোপুরি সোনায় তৈরি। কোনোভাবে মরিচা ধরার কথা নয়। মেডেল তৈরির পর আমরা বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের কাছ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আনি। যে ধরণের অভিযোগের কথা শুনছি, এর আগে এমন কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে এমনটা যদি ঘটে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই দুঃখজনক। আমি মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করব। সাধারণত, সোনার মেডেল বা ক্রেস্ট বানানোর দায়িত্ব পায় একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এখন কবেকার মেডেলে মরিচা পড়েছে তা আগে বের করতে হবে। ওই সময় কারা কাজটি করেছে, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার বিষয় আছে। আমরা জানতে পারলে, পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি কিংবা ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করব।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তথ্যমন্ত্রনায়লের আরও দুজন কর্মকর্তার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হলে তাঁরা বিস্ময় প্রকাশ করেন।
আগামী ৮ জুলাই ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম মিলনায়তনে ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণী ব্যক্তিদের হাতে তুলে দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন