চলতি বছর দেশে ধান উৎপাদন পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন হবে
চলতি বছর দেশে তিন দফা বন্যার কারণে ধানের উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।
এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে সংস্থাটি। এফএও প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে যেখানে ৫ কোটি ৮০ লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছিল সেখানে ২০১৭ সালে তা ৫ কোটি ২১ লাখ টনে নেমে আসবে।
এ হিসেবে দেশে এ বছর ধানের উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ কমবে। চালের আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এছাড়া আটা ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের দামও বাড়ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্বের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে এফএও সম্প্রতি প্রকাশিত মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, চলতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও খরার কারণে বিশ্বে বাংলাদেশসহ ৩৭টি দেশে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
যদিও সংস্থাটি বলছে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়েছে, দামও কমেছে। বিশেষ করে চাল-গম বা দানাদার খাবারের দাম কমতির দিকে। তবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের আটটি দেশের বাজারে প্রধান খাদ্য চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন নিয়ে এফএওর এই উদ্বেগ নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, কয়েক দফা বন্যা ও হাওরে বিপর্যয়ের কারণে চলতি বছর ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি অতি বৃষ্টির কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দেশজ উৎপাদন বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া ঘাটতি নিরূপণের মাধ্যমে আগ থেকে পরিকল্পনার করে আমদানি বাড়াতে হবে।
এফএওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কয়েক দফা বন্যায় ধানের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত— হয়। দেশটির অধিকাংশ জেলায় ফসলহানি হয়েছে। ফলে প্রধান দুই জাতের ধান বোরো এবং আমন উৎপাদন কমেছে। দেশের মোট উৎপাদনের ৯০ শতাংশ আসে এ দুটি ধানের জাতের মাধ্যমে ।
এ অবস্থায় বাংলাদেশে চালের দাম বেড়েছে মূলত গত বোরো মৌসুমে বন্যার পর ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে। ফলে গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত টানা চালের দাম বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশ সরকার চালের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েক দফায় চালের শুল্ক কমিয়ে দেয়। এতে বেসরকারি খাতে চালের আমদানি কিছুটা বেড়ে গিয়ে দাম কমতে থাকে। সরকার চালের আমদানি শুরু করায় বাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাবও পড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফ্রিকার সাব সাহারার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো খাদ্যঝুঁকিতে থাকার বিষয়ে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে খাদ্যঝুঁকি বিষয়ে সংস্থাটি সতর্কবার্তা দেয়। ওই মাসে পেরু, কেনিয়া ও উগান্ডার নামও ছিল।
কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসায় পরবর্তী মাসগুলোতে ওই তিনটি দেশের নাম বাদ পড়ে বা সতর্কবার্তা তুলে দেয়া হয়। চলতি বছরের মে মাস থেকে বাংলাদেশকে সতর্কবার্তা দেয় এফএও।
এফএওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বছর বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদন ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। সংস্থাটি বলছে গত বছর সারা বিশ্বে ৫০ কোটি ১৮ লাখ টন চাল উৎপাদিত হলেও এ বছর তা ৫০ কোটি ৮ লাখে নেমে আসতে পারে। উল্লেখ্য, চীন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পরে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ সর্বোচ্চ চাল উৎপাদনকারী দেশ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন