চাঁদপুরের মতলব উত্তরে আ.লীগ দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, নিহত ১
চাঁদপুর মতলব উত্তরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মোবারক হোসেন বাবু (৪৮) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী জানান, বাহাদুরপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা রাজ্জাক প্রধানের সাথে আলমগীর মেম্বারের দীর্ঘদিন যাবত কলহ চলে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে মোবারক হোসেন বাবু গুরুতর আহত হলে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসা অবস্থায় মারা যান। তার মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মোহনপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আলমগীরের নেতৃত্বে আ. আলী মাস্টারের ছেলে রনি সিকদার, মর্তুজ খলিফার ছেলে নান্নু মিজি, দলু প্রধানের ছেলে বাবুল প্রধান ও ফজলু প্রধান, আবুল বেপারীর ছেলে আয়না, ননি সিকদারের ছেলে সিটু সিকদার, আবুল বেপারীর ছেলে নুর হোসেন কালু, আবু মিজির ছেলে জামান, নান্নু মিজির ছেলে ফয়সাল ও কাউসার, আবুল বেপারীর ছেলে সামসুসহ প্রায় ২শ যুবক ও রাজ্জাক প্রধানের লোকজনের মধ্য এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে ৷
জানা যায়, বাহাদুরপুর গ্রামের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রাজ্জাক প্রধানের বাড়িতে হামলা করে ৩টি বসতঘর ভাঙচুর করে ঘরে থাকা স্বর্ণলংকার টাকা-পয়সাসহ ৬টি গরু রাজ্জাক প্রধানের মেয়ে হোসনে আরা ২টি গরু, মুছা গাজীর ১টি বসতঘর ভাঙচুর করে ঘরে থাকা স্বর্ণলংকার টাকা-পয়সা ও ১টি গরুসহ মোট ১০টি গরু নিয়ে যায় হামলাকারীরা৷ এছাড়াও উকিল ঢালির ৪টি বসতঘর ভাঙচুর করে ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সা নিয়ে হুমকি প্রদর্শন করে চলে যায় হামলাকারীরা।
ভাঙচুরের ঘটনায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়ে জানার জন্য ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার ফোন নাম্বারে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি ৷
৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রাজ্জাক প্রধান জানান, সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার আজ মাথাভাংগা স্কুলমাঠে একটি জনসভা ছিলো এই জনসভাকে কেন্দ্র করে হামলাকারীরা সকাল থেকেই মিছিল বের করে বাহাদুরপুরে আধিপত্য বিস্তার করে হুমকি প্রদর্শন করে আসছিল। বেলা ২টায় মায়ার জনসভা স্থলে যাওয়ার সময় ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার আলমগীর ও নুর হোসেন কালুর নেতৃত্বে প্রায় ২শ লোক আমাদের বাড়িতে ঢুকে ৮টি বসতঘর ভাঙচুর করে ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সাসহ ১০টি গরু নিয়ে যায়। তার আগেও কয়েকবার আমাদের বাড়িঘরে হামলাকরে লুটপাট করেছে এই হামলাকারীরা এবং আমার নামসহ আমাদের বহু লোকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করে আসছে হামলাকারীরা৷ আমি গত ৪২ বছর ধরে ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েও তাদের ভয়ে আমিসহ বহু লোক আজ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি ৷ আমি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি ৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাহাদুরপুরের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মায়ার জনসভাকে কেন্দ্র করে খুনি মামলাসহ একাধিক মামলার পলাতক আসামি নুর হোসেন কালু আজ বাহাদুরপুর গ্রামে আসে এবং নুর হোসেন কালু, মেম্বার আলমগীরের নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বসতঘরে হামলা করে বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট এবং দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে ৷
রাজ্জাক প্রধান ও তার প্রতিপক্ষ আলমগীর মেম্বার এই দুই গ্রুপের মাঝে পাল্টা-পাল্টি বাড়িঘর ভাঙচুর,অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও মার্ডার মামলাসহ একাধিক মামলা চলমান রয়েছে বলে তারা জানান ৷
তারা বলেন, সমাজে হেয় করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমানের নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে সংষর্ষে জড়িত থাকা লোকজন ৷
এলাকাবাসী আরও বলেন, কাজী মিজানুর রহমান একজন ভালো মানুষ। তিনি সমাজে অশান্তি চান না। তিনি চান মোহনপুরবাসীর শান্তি এবং জনগণের উন্নয়ন ৷ একটি গোষ্ঠী চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমানের একের পর এক উন্নয়ন দেখে তারা বিভিন্নভাবে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং চেয়ারম্যান কাজী মিজানকে এই হত্যার সাথে জড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে ৷ আমরা এই ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জানাই৷
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মহিউদ্দিন বলেন, বসতঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও মার্ডারের বিষয়ে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ৷
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন