চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ত্রিনয়নী সংঘের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা

বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য শারদীয় দুর্গোৎসব। প্রতিবছর দুর্গাপূজা মানেই আনন্দ, ভক্তি ও উৎসবের মেলবন্ধন। তবে এবারের দুর্গোৎসবের সূচনা হাজীগঞ্জ ত্রিনয়নী সংঘে ভিন্ন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ষষ্ঠী পূজার পূর্ব মুহূর্তে এক ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুভারম্ভ ঘটে এই বছরের পূজার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি রুহি দাস বণিক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একই সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রাণ কৃষ্ণ সাহা মনা, হাজীগঞ্জ পৌর শাখার সভাপতি রাধাকান্ত দাস রাজু, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সাহা এবং উপজেলা সহ-সভাপতি সঞ্জয় কুমার কর্মকার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিরা ঐতিহ্যবাহী আচার অনুযায়ী ‘পিতা কেটে’ প্যান্ডেলে প্রবেশ করেন। প্রধান অতিথি রুহি দাস বণিকের হাতে মঙ্গলদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা হয় দুর্গোৎসবের। এর মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার পাশাপাশি মÐপে উপস্থিত সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ধর্মীয় আবহ ও পবিত্রতার স্পন্দন।
প্রতিটি অতিথিকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানানো হয়। অতিথিদের এমন সম্মাননা পুরো অনুষ্ঠানকে আরও বর্ণাঢ্য করে তোলে। এই ব্যতিক্রমী আয়োজনকে ঘিরে এলাকাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
ত্রিনয়নী সংঘের সভাপতি গোপাল সাহা এবং সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত পাল অতিথিদের স্বাগত জানান। সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন বাবুল দাস, দুলাল দাস, বিজয় সরকার, সুজন রায়, অজয় সরকার, জুয়েল আইচ, কৌশিক বণিক, ডা. বিকাশ দেবনাথ ও পঙ্কজ সাহা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন পণয় রায়।
এসময় বক্তারা বলেন, দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি এখন এক সামাজিক মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে। এখানে হিন্দু স¤প্রদায়ের পাশাপাশি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও আনন্দে শরিক হয়। পূজামÐপগুলো এখন স¤প্রীতির প্রতীক। বিশেষ করে ত্রিনয়নী সংঘ প্রতিবছর পূজাকে নতুনত্বের মাধ্যমে আয়োজন করে থাকে, যা স্থানীয়দের কাছে প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রধান অতিথি রুহি দাস বণিক তাঁর বক্তব্যে বলেন, “শারদীয় দুর্গোৎসব আজ আর কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। হাজীগঞ্জ ত্রিনয়নী সংঘ এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।”
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রাণ কৃষ্ণ সাহা মনা বলেন, “আমাদের এই পূজার মূল বার্তা হলো শান্তি, স¤প্রীতি ও মানবতার কল্যাণ। প্রতিটি মানুষ যেন এই উৎসব থেকে ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা গ্রহণ করে।”
হাজীগঞ্জ পৌর শাখার সভাপতি রাধাকান্ত দাস রাজু ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সাহা বলেন, দুর্গাপূজার মাধ্যমে সমাজে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ব আরও সুদৃঢ় হয়। এজন্য পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিটি শাখা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শনার্থীরাও জানান, এ ধরনের আয়োজন স্থানীয়দের জন্য অনন্য অনুপ্রেরণা। ত্রিনয়নী সংঘ শুধু পূজার আয়োজনই করে না, বরং সামাজিক ও মানবিক কর্মকাÐেও সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
পূজা উপলক্ষে এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরাও সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। ফলে মÐপে আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীরা নির্বিঘেœ পূজা উপভোগ করতে পারছেন।
হাজীগঞ্জ ত্রিনয়নী সংঘের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এলাকায় আলোচনার ঝড় তুলেছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দ-উল্লাসকে দ্বিগুণ করতে তাদের এই আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য সংগঠনের জন্যও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন