চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে মন্ডপ পরিদর্শন ও আর্থিক সহায়তা

বাংলার চিরায়ত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও পৌরসভার বিভিন্ন পূজা মÐপে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্বজনীন এই উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক আয়োজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এরই অংশ হিসেবে সোমবার, (২৯ সেপ্টেম্বর) খ্রিষ্টাব্দ, বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজীগঞ্জ পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে একযোগে বিভিন্ন পূজা মÐপ পরিদর্শন ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়।

দিনব্যাপী পূজা-অর্চনা শেষে বিকেলের পর থেকে পৌর উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন পূজা মÐপ পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু করেন।

পর্যায়ক্রমে হাজীগঞ্জ পৌরসভার প্রায় সবকটি পূজা মÐপে গিয়ে তাঁরা স্থানীয় পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য, পূণ্যার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং দুর্গোৎসবের সার্বিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এ সময় প্রতিটি মÐপে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়, যা স্থানীয় আয়োজকদের মধ্যে উৎসাহের সঞ্চার করে।

এই কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন হাজীগঞ্জ পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাধাকান্ত দাস রাজু ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সাহা। তাঁদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি ডা. নরেশ রায়, সহ-সভাপতি প্রণব কুমার সাহা, সহ-সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ, সহ-প্রচার সম্পাদক বিজয় সরকার, সহ-কোষাধ্যক্ষ সুমন সাহা, সহ-গণসংযোগ বিষয়ক সম্পাদক সুজন রায়, দপ্তর সম্পাদক বিপক সাহা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিলি সাহা এবং সম্মানিত সদস্য শিমুল সাহা।

প্রতিটি মÐপে গিয়ে তাঁরা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে পূজার পরিবেশ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আলোকসজ্জা এবং সাংস্কৃতিক আয়োজন পরিদর্শন করেন।

প্রতিটি মÐপে গিয়ে পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। স্থানীয় মÐপ কমিটির নেতৃবৃন্দ এই অর্থ গ্রহণ করে ধন্যবাদ জানান এবং জানান, এ ধরনের সহায়তা তাঁদের পূজা আয়োজনকে আরও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে। নগদ সহায়তার পাশাপাশি নেতৃবৃন্দ পূজার সার্বিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেন।

মÐপ পরিদর্শন উপলক্ষে প্রতিটি স্থানে ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড় জমে যায়। স্থানীয় পূণ্যার্থীরা জানায়, নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি তাঁদের উৎসবের আনন্দ দ্বিগুণ করে তোলে। মÐপ কমিটির নেতৃবৃন্দও বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদ তাঁদের পাশে থেকে শুধু আর্থিক নয়, মানসিকভাবেও সাহস জোগায়।

স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় দাস জানান, “আমরা প্রতিবছর দুর্গোৎসব পালন করি, কিন্তু সংগঠিতভাবে পৌর উদযাপন পরিষদ যে ভাবে আমাদের সহযোগিতা করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁদের উপস্থিতিতে পূজার আমেজ আরও বাড়ে।”

একইভাবে উপস্থিত এক ভক্ত মিলা রায় বলেন, “পৌর উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ আমাদের খোঁজখবর নিতে আসেন, এতে আমরা বুঝতে পারি উৎসব কেবল আমাদের নয়— এটি একটি সামগ্রিক সামাজিক আয়োজন।

পৌর এলাকায় চলমান দুর্গোৎসবে প্রতিটি মÐপেই জমকালো আলোকসজ্জা, সাউন্ড সিস্টেম এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি মÐপে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় ভক্তরা মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল কড়া। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় মÐপ এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়।

সভাপতি রাধাকান্ত দাস রাজু বলেন, “দুর্গাপূজা হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। আমরা চাই এই উৎসব সবার জন্য আনন্দমুখর ও নিরাপদ হোক। এজন্য পূজা মÐপগুলোতে গিয়ে আমরা শুধু সহযোগিতা নয়, নিরাপত্তার দিকেও খোঁজখবর নিয়েছি।”

সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সাহা বলেন, “আমরা প্রতিটি মÐপে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। এই সহায়তা হয়তো বড় কিছু নয়, কিন্তু এটি আমাদের সবার ঐক্যের প্রতীক। পূজা হচ্ছে মিলনমেলা, তাই আমরা সবাইকে একসাথে নিয়ে এই আয়োজন করি।”

হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার দুর্গোৎসবকে ঘিরে কেবল সনাতন স¤প্রদায়ের মানুষ নয়, ভিন্ন ধর্ম ও স¤প্রদায়ের মানুষও উৎসবে শরিক হয়েছেন। এটি সামাজিক স¤প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পূজা মÐপে মুসলিম স¤প্রদায়েরও অনেক মানুষ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন।

সহ-সভাপতি ডা. নরেশ রায় বলেন, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। পূজা মানে মিলন, স¤প্রীতি আর ঐক্য। হাজীগঞ্জে আমরা সবসময় একসাথে থেকে আনন্দ ভাগাভাগি করি।

দুর্গোৎসব কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি সামাজিক উৎসব। দেবী দুর্গার আগমনে যেমন অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটে, তেমনি মানুষের মধ্যে জাগ্রত হয় শুভশক্তি, সাহস ও ঐক্যের বার্তা। পৌর উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ তাঁদের বক্তব্যে বারবার এই বার্তার প্রতিধ্বনি শোনান।

সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিলি সাহা বলেন, “দেবী দুর্গার আগমন মানেই শুভ শক্তির জয়। পূজার সাংস্কৃতিক পরিবেশ মানুষকে বিনোদিত করে, আবার একই সঙ্গে সামাজিক মূল্যবোধও জাগিয়ে তোলে।”

দিনভর নানা পূজা মÐপ পরিদর্শন শেষে গভীর রাতে নেতৃবৃন্দের কার্যক্রম শেষ হয়। উপস্থিত নেতৃবৃন্দ সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দুর্গাপূজার আনন্দ হোক সকলের। তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী বছরগুলোতেও একইভাবে সবাই একসাথে মিলেমিশে দুর্গোৎসব পালন করবে।

পৌর উদযাপন পরিষদের সম্মানিত সদস্য শিমুল সাহা বলেন, “আমরা চাই, আগামী প্রজন্মও আমাদের এই সুন্দর পূজা উদযাপনের ঐতিহ্যকে ধরে রাখুক। এজন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

হাজীগঞ্জ পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে পূজা মÐপ পরিদর্শন ও নগদ সহায়তা প্রদান শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি তাঁদের দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে স্থানীয় মানুষকে একত্রিত করা, সামাজিক স¤প্রীতি জাগ্রত করা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করা— এই কার্যক্রম সেই মহৎ উদ্দেশ্যেরই প্রতিফলন।