চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার প্রস্তাব সংসদে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে গেছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন সংসদকে জানিয়েছেন, চাকরির বয়স না বাড়ানোর বিষয়ে সরকার আগেই নীতিতেই অটল রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভাল। ২২-২৩ বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর করছেন। চাকরিতে প্রবেশের জন্য এই ৭ বছরই যথেষ্ট।’
বৃহস্পতিবার রাতে সংসদ অধিবেশনে বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের বিধিতে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবুল।
প্রথমে প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। কিন্তু, প্রস্তাবকারী রেজাউল করিম বাবলু অসম্মতি জানান।
পরে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া প্রস্তাবটি ভোটে দেন। সেখানে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
পরে ফরহাদ হোসেন প্রস্তাব না মানার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে সরকারের একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ছিল ২৫ বছর। পরে ২৭ করা হয়। এরপর ৩০ বছর করা হয়েছে। কিন্তু, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩২ বছর।’
তিনি বলেন, ‘আগে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশন জট লেগে থাকতো। কিন্তু, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভাল। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন সেশন জট নেই। যে কারণে শিক্ষার্থীরা ২৩ বছরেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করছে। কাজেই শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরির জন্য তারা ৭ বছর যথেষ্ট সময় পাচ্ছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তাব অনুযায়ী যদি ২৩ বছরে একজন শিক্ষার্থী লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে প্রবেশ করেন। আর ৩৫ বছরে একজন চাকরিতে প্রবেশ করেন তাহলে দু’জনের মধ্যে বয়সের অসামঞ্জস্যতা দেখা দেবে। এ কারণে একই পদে চাকরি করার ক্ষেত্রে মনস্তাস্তিক সমস্যা হতে পারে। তাই প্রস্তাবটি আমাদের কাছে অত যৌক্তিক মনে হয়নি।’
‘তা ছাড়া আমাদের দেশে সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়স সীমা ৫৯ বছর। সরকারি চাকরিতে পেনশন পেতে হলে অন্তত ২৫ বছর চাকরি করতে হয়। সেক্ষেত্রে যদি ৩৫ করা হয় তাহলে দেখা যাবে চাকরিতে প্রবেশ করতে ৩৫ বা ৩৭ বছর লেগে গেলে, ৫৯ বছর থেকে ৩৭ বছর বাদ দিলে মাত্র ২২ বছর হয়। পেনশন পেতে ঝামেলা হবে। কাজেই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বর্তমান নীতিই উপযুক্ত কলে মনে করছে সরকার’, যোগ করেন তিনি।
তবে বর্তমান সরকার অনেক চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করছে বলে দাবি করেন ফরহাদ হোসেন।
এর আগে রেজাউল করিম বাবুল প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। তাকে সমর্থন করে সরকারি ও বিরোধী দলের মোট ১০ সদস্য।
প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বাবুল বলেন, ‘বিশ্বের ১৯৯টির ১৫৫টি দেশে চাকিরতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫-৫৯ পর্যন্ত। আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইরাক, ইরান এ রকম ১৫৫টি উন্নয়নশীল দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৮ লাখের বেশি। লেখাপড়া শিখে যখন একটা সন্তান বেকার থাকে, তখন তারা পরিবারের কাছে বড় বোঁঝা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা এই বোঝা আর বাড়াতে দিতে চাই না। তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ বছর করা হোক।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন