চাকসু গঠনতন্ত্র নিয়ে যেসব প্রস্তাবনা দিল পার্বত্য কেন্দ্রিক সংগঠন পিসিপি

পার্বত্য জেলা কেন্দ্রিক সংগঠন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)-এর গঠনতন্ত্র প্রস্তাবনা নিয়ে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি), বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল(বিএমএসসি), ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম(টিএসএফ)সহ পাহাড়-সমতলে ক্রিয়াশীল জাতিসত্তাভিত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলো।
সোমবার (২৬ মে) দুপুর ১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা চাকসু গঠনতন্ত্রে ‘আদিবাসী’ বা সংখ্যালঘু জাতিসত্তা বিষয়ক সম্পাদকের পদ অন্তর্ভূক্তিসহ পরিবহন ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক, নারী বিষয়ক সম্পাদক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকের পদ নিয়ে প্রস্তাবনা তুলে ধরেন এবং অতীশ দীপংকর হল ও নবাব ফয়জুন্নেসা হল-এ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে ভিপি অথবা জিএস যেকোন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বহু জাতি, বহু ভাষা, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাহাড় ও সমতলের প্রায় ১৫’টির অধিক বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে, যার সংখ্যা প্রায় ৭শতাধিক।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটসহ কিছু বিশেষায়িত বিভাগ রয়েছে। জাতিগোষ্ঠীসমূহের শিক্ষার্থীদের অধিকার, ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ, সংরক্ষণ ও গবেষণায় চাকসু হতে পারে শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম।
এতে আরো বলা হয়, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কিংবা পিছিয়ে পড়া অঞ্চল থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমান অবস্থান ও মর্যাদা নিশ্চিত করবে। যা অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম সৌন্দর্য। দেশের ‘সেকেন্ড পার্লামেন্ট’ খ্যাত ছাত্র সংসদ এক্ষেত্রে একটা বড় উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘আদিবাসী’ বা সংখ্যালঘু জাতিসত্তা বিষয়ক সম্পাদকের পদ নিয়ে যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭শ’র অধিক বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। বহু ভাষা, জাতি, ধর্মে ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যপূর্ণ ক্যাম্পাস আর দেশে কোথাও নেই। পিছিয়ে পড়া এবং সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের অধিকার সুনিশ্চিতকরণ, ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা, গবেষণা নিশ্চিতকরণে এই সম্পাদক পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠী থেকে নির্বাচিত হবে।
রেসিজম, বুলিং প্রতিরোধসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও স¤প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় করবে। এছাড়াও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি যা এদেশের সম্পদ তা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরবে। ৭৩’এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেটে যে ৫জন ছাত্র প্রতিনিধি থাকবে তাঁর মধ্যে পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীর এই সম্পাদক প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
পরিবহন ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদকের পদ নিয়ে যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র বাহন শাটল ট্রেন। শাটলে বগি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা, সিট নিশ্চিতকরণ এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে চক্রাকার বাস চালুসহ পরিবহণ সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা।
অথচ ৮৫%শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে মেসে বা কটেজে এবং শহর থেকে যাতায়াত করে। শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিতকরণ এবং হলগুলোতে বৈধভাবে সিট নিশ্চিত করণেও হল ছাত্র সংসদ ও প্রশাসনের সাথে এই সম্পাদক কাজ করবে।
নারী বিষয়ক সম্পাদকের পদ নিয়ে যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে অন্তরভুক্ত হয়ে সেলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, স্বচ্ছতা ও ন্যায্য বিচার নিশ্চিতে কাজ করবে। নারী শিক্ষার্থীদের সাইবার বুলিং কিংবা হেনস্তার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে এবং ব্যাক্তি স্বাধীনতা ও পোশাকের স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করবে। এছাড়াও নারী হল, অনুষদে নারীদের ঋতুস্রাবকালীন, মাতৃত্বকালীন ও স্বাস্থ্যগত জটিলতা নিরসন ও সমঅধিকার নিশ্চিতকরণে কাজ করবে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকের পদ নিয়ে যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারকে অত্যাধুনিক হসপিটালে পরিণত করা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে এই সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কাজ করবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বিমা চালু নিশ্চিত করবে।
হল ছাত্র সংসদ নির্বাচন বিষয়ে যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান হল এবং নবাব ফয়জুন্নেসা হলে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি থাকে যা হলের মোট সিটের প্রায় অর্ধেক। এসব হলে সংসদ নির্বাচন হলে ভিপি অথবা জিএস যেকোন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
এছাড়া অন্যান্য প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১) অনুচ্ছেদ ২অনুযায়ী চাকসু’র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয় সকল শিক্ষার্থীর সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করা, সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের উন্নতি এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে একটি চাপ প্রয়োগকারী সংস্থা এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন নীতির সমালোচনা ও নাগরিক অধিকার চর্চার একটি মুখপাত্র হয়ে উঠা উচিত।
২) অনুচ্ছেদ ৭অনুযায়ী ছাত্র সংসদের সভাপতি ভিসিকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটি’র চেয়ে ভিসির ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ‘চেক এন্ড ব্যালেন্স’ হওয়া উচিত। যেমন: চাকসু নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাতিল কমিটি সদস্যদের ‘দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে নির্ধারণ হওয়া উচিত। এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চাকসু ভেঙে দেওয়ার সর্বময় ক্ষমতা ভিসির হাতে না থেকে নির্বাহী কমিটি’র হাতে থাকা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল(বিএমএসসি)’র সাংগঠনিক সম্পাদক সাথোয়াইঅং মারমা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম (টিএসএফ)’র চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ধন রঞ্জন ত্রিপুরা, সাংস্কৃতিক কমিটি(বিএমএসসি) সাধারণ সম্পাদক সিংয়ইপ্রæ মারমা, ওঁরাও জনগোষ্ঠীর সমাজতত্ত¡ বিভাগ প্রতিনিধি পিযুষ টপ্য, ও ইংরেজি বিভাগ(২০২৩-২০২৪ সেশন) সিনেট চাকমা।
সংবাদ সম্মেলন শেষে বেলা ২:৩০টার সময় সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ চাকসু গঠনতন্ত্র প্রস্তাবনা ফাইল আকারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য(প্রশাসন) ও চাকসু নীতিমালা কমিটির প্রধান ড. কামাল উদ্দিনের হাতে তুলে দেন।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন