চালের দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরায় কমেনি
বাজারে পাইকারিতে চালের দাম পড়তির দিকে থাকলেও প্রভাব নেই খুচরা বাজারে। রাজধানীর অনেক দোকানে চাল বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। দু-একটি দোকানে কমেছে এক-দেড় টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু এলাকায় আগাম ইরি-বোরো ওঠায় পাইকারি বাজারে পড়তির দিকে চালের দাম। তারা বলেন, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম ৩ থেকে ৪ টাকা কমেছে। নতুন চাল পুরোদমে বাজারে এলে আরো দাম কমবে বলে আশা পাইকারি দোকানিদের।
শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) মতিঝিল এজিবি কলোনি বাজারে যশোর রাইস এজেন্সিতে আগের দামেই চাল বিক্রি করতে দেখা যায়। জানতে চাইলে দোকানের স্বত্বাধিকারী আনিসুল হক বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম কমেছে। তবে আমরা তো এসব চাল আগে বেশি দামে কিনে এনেছি। তাই এখনো দাম কমানো সম্ভব হয়নি।’
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন আগেও পাইকারিতে প্রতি কেজি মোটা চালের (স্বর্ণা) দাম ছিল মানভেদে ৪২-৪৪ টাকা। তবে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে ক্রেতাকে এই চাল কিনতে হচ্ছে ৪২-৪৪ টাকায়।
সরু চালের দামও খুচরায় তেমন কমেনি। পাইকারি বাজারেও এসব চালের দাম কমেছে ২ টাকা। এখন মাঝারি মানের সরু চাল (মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে মিনিকেট কিনতে হলে প্রতি কেজিতে গুনতে হবে ৬২ টাকার উপরে। পাশাপাশি কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করা কিছু সরু চাল পাইকারি বাজারে ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে এত কম দামে সরু চালের দেখা মেলা দুষ্কর। খুচরা বাজারে আরেক চালু পদ নাজির চালও বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
তবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, মোটা চালে এক মাসের ব্যবধানে ৬.৮২ শতাংশ দাম কমেছে। বাজারে এখন মোটা চালের দাম গত বছরের সমান। খুচরা বাজারে ৩৮ থেকে ৪৪ টাকায় মিলছে মোটা চাল। তবে মোটা চালের মধ্যে একটু ভালোমানের বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৮ টাকায়। আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৮ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে যা ১.৫৪ শতাংশ কমেছে।
বাবু বাজারে এনবি ট্রেডার্সের পাইকারি বিক্রেতা একরামুল মিয়া বলেন, এক দিকে প্রচুর আমদানি চাল বাজারে এসেছে। অন্যদিকে কিছু এলাকার বোরো চালও আসতে শুরু করেছে। এ কারণে দাম কমেছে। এ মৌসুমের চাল পুরোপুরি বাজারে এলে দাম আরো কমবে।
গত বছর সরকারের চালের মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছিল। বছরের মাঝামাঝি সময় চালের মজুতের পরিমাণ ছিল দুই লাখ টনেরও নিচে। সে সময় খাদ্য ঘাটতিতে বেড়ে যায় চালের দাম। তবে এ বছর সেই তুলনায় স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে এসেছে সরকারের খাদ্যশস্য মজুত।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি রিপোর্টের তথ্যে দেখা গেছে, এখন সরকারের চালের মজুত ৮ লাখ ২১ হাজার টন। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ২৬ লাখ ৫৮ হাজার টন চাল দেশে আমদানি হয়েছে।
আগামী ২মে থেকে বোরো মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু করছে সরকার। এবার বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় সরকার এবার আরো ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছে। এর মধ্যে আট লাখ টন সিদ্ধ চাল, এক লাখ টন আতপ চাল এবং দেড় লাখ টন বোরো ধান (দেড় লাখ টন ধানে এক লাখ টন চাল পাওয়া যাবে)।
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টন ধান-চাল উৎপন্ন হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বছরে খাদ্য চাহিদা রয়েছে ৩ কোটি টনের মতো। বাকি প্রায় ৬০ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। ২০১৬ সালে এমন পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে ৫০ হাজার টন চালও রফতানি হয়েছিল। কিন্তু তারপরও গত বছর দুই দফায় বন্যায় তীব্র চাল সঙ্কটের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ, যা থেকে এখনো পুরোপুরি উত্তরণ সম্ভব হয়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন