চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক! ১ বছরে কৃষি ছেড়েছে ১৬ লাখ কৃষক
কৃষিতে তথ্য-প্রযুক্তি ও যান্ত্রিকীকরণের যুগে বাংলাদেশ প্রবেশ করলেও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে এ খাত। কৃষিতে খরচের সাথে সাথে বাড়ছে উৎপাদন। ফলে যোগান আসছে বেশি চাহিদা হচ্ছে নিন্মমূখী। চাহিদার সাথে সাথে আবার কমছে দামও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ছিল ৩ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কৃষকের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬০ হাজার। মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে কৃষকের সংখ্যা কমেছে ১৫ লাখ ৮০ হাজার।
আবার বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ইকোনমিকস প্রসপেক্টস ২০২৪ এর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী চালের সরবরাহ কমেছে ২৭ শতাংশ। ২০২৪ ও ’২৫ সালে জ্বালানির দামবৃদ্ধি, প্রতিক‚ল আবহাওয়া, বাণিজ্য বিধিনিষেধ ও ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা খাদ্যের দামে প্রভাব ফেলতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের সর্বশেষ প্রান্তিক কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম, মাত্র শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এদিকে ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী ১০ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকদের ৩৭ দশমিক ৯১ শতাংশ কৃষিশ্রমিক, অথচ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে এ হার ছিল ৪৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ১১ বছরে কৃষক কমেছে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ। শুধু কৃষিতেই শ্রমিক কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে কৃষিশ্রমিক কমে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ সহ বিভিন্ন কারণে কৃষিতে আগ্রহ কমছে চাষিদের। এছাড়াও কৃষি খাত ছেঁড়ে বিদেশগামী হচ্ছেন বড় একটি অংশ। যার ফলে শ্রমিক সংকট তৈরি হচ্ছে। আবার একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক অনেকসময় ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়না। ফলে অনেকেই কৃষি ছেঁড়ে শহরমূখী হচ্ছেন।
প্রান্তিক চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা দিন রাত পরিশ্রম করে ফসল ফলান। বাজারে যখন সেই সবজী নিয়ে যান তখন বিভিন্ন শ্রেণীর দালালদের খপ্পরে পড়তে হয় তাদের। চাষে যেভাবে সার, কীটনাশক, শ্রমিক ও বীজের দাম বেড়েছে তা দিয়ে চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।
আবার যারা ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক চাষাবাদে আসছেন অনেকেই সফলতা না পেয়ে কৃষি বিমূখ হচ্ছে। পাশাপাশি শ্রমিক সংকট তীব্র হচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষি শ্রমিক খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। অধিক উৎপাদন হলেই বাজারের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। পণ্য বিক্রিতে পদে পদে হয়রানী হতে হয়। আবার অনেক কৃষক পরিবার কষ্টের মধ্যে দিয়ে তাদের সন্তানদের ভালো পড়াশোনার মাধ্যমে উন্নত পেশায় নিয়োজিত করিয়েছেন।
তাঁদের ভাষ্যমতে কৃষি একটি অনিশ্চিত পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনেকেই জীবন জীবিকার তাগিদে কৃষি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
কৃষি খাতকে লাভজনক করতে না পারলে অচিরেই কৃষক এর সংখ্যা কমতে থাকবে। ফলে উৎপাদন কমে দাম যেমন বাড়বে তেমনি বাড়তে পারে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন