চুয়াডাঙ্গায় আগেভাগেই শরীরে শিহরণ জাগাচ্ছে শীত, বইছে বাতাস-চলছে খেজুর গাছ পরিচর্যা

সারাদেশেই প্রকৃতির শীত পড়ে প্রতি বছরই। কিন্তু শীতের চ্যালেঞ্জ করলেও দেখা যাবে, চুয়াডাঙ্গায় শীতের আর্দ্রতা সবসময়ই যেমন বেশি পড়ে তেমনী আগেভাগে শুরু হয় শীতের ঠান্ডাও। এবারও কিন্তু ব্যত্যয় ঘটেনি চুয়াডাঙ্গাতে।

সকাল থেকে দুপুর বিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলেও বিকেলের পর থেকে শীতের ঠান্ডার যে অনুভূতি সেটা ঠিকই নিচ্ছে মানুষ। সন্ধ্যার পর থেকে রাতভর অর্থ্যাৎ ভোর বা খুব সকাল পর্যন্ত প্রকৃতির যে আসল ঠান্ডা তা শরীরে শরীরে শিহরণ জাগাচ্ছে। মনে পড়ে যাচ্ছে শীতকালের আসল সৌর্ন্দের কথা।

চুয়াডাঙ্গা এই ছোট্ট মফস্বল শহরস্থের থেকে গ্রাম্য প্রকৃতি অনেকটাই বেশি। আর সেজন্যই শীতের প্রকৃত অনুভূতি বয়ে চলে চুয়াডাঙ্গায়। সেই একই ধারায় এবারও ঠিক নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পার হতেই শিউরে শিউরে ঠান্ডা শুরু হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। বাইরে বের হলেই দেখা যাচ্ছে, মানুষের গাঁয়ে শীতের পোশাক। কেউ একটু মোটা বা কেউ বেশি মোটা পোশাক পরতেও দেখা যাচ্ছে শহরের মানুষের।

গরমের পরশ কাটিয়ে হঠাৎ শীতের অনুভূতিতে ঠান্ডা জ্বর কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তিও হচ্ছে শিশুসহ সকল বয়সের মানুষ। শুধু তাইই নয় বাইরে থাকা জনখাটা মানুষের আস্তে আস্তে বিপদে পড়ার আশঙ্কা তৈরী হচ্ছে। বিকেলের পর থেকে যে পরিমাণ ঠান্ডা পড়ছে তাতে করে গাঁয়ে মোটা পোশাক ছাড়া রিক্সা-ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন চালাতে পারছেনা চালকরা। সকালের দিকে কোয়াশার ধোয়া দেখা যাচ্ছে গ্রামের মেঠোপথে।

এদিকে, খেজুর গাছ পরিচর্যার তোরজোর শুরু হয়েছে চুয়াডাঙ্গার গ্রামে গ্রামে। এভাবে প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে কৃষক-কৃষাণীদের জায়গায় জায়গায় ব্যস্ততার আসর। তবে আর কিছুদিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে গাছে ভাড় বসানোর কাজ। সন্ধ্যা হতেই গাছে গাছে ভাড় বসানোর দৃর্শ্যপট যেনো মনে করিয়ে দেবে শীতের যত সুখের কথা। তার কয়েকদিন পর থেকে রস যখন পরিপূর্ণ হবে সেই থেকে তৈরী হবে ভেজালমুক্ত খেজুরের গুড়।

যে গুড়ের সুনাম সারাদেশ জুড়ে রয়েছে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের নাম। প্রতি বছরই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গুড় কিনতে আসে ব্যবসায়ীরা। এবারও তার ব্যত্যয় হবে না ৩০ বছরের ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ গুড়ের হাটে ছুঁটতে ছুঁটতে আসবে ভেজালমুক্ত গুড় কেনার জন্য।

অপরদিকে, দারুণ ব্যাপার হচ্ছে শীতকে ঘিরে এই গুড়ের ব্যবসা করে এ অঞ্চলের মানুষ মোটা অংকের ব্যালেঞ্চ তৈরী করে স্বাবলম্বী হয় অনেকেই। প্রতি বছর গুড়ের হাট যখন শুরু হয় সেসম প্রতি সপ্তাহে ১ কোটি টাকার কমবেশি গুড় বেচাকেনা হয়ে থাকে এই হাটে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা চুয়াডাঙ্গায় রস গুড় এখনও পর্যন্ত তৈরী না হলেও শীতের অন্যতম ভাপা পিঠা অলরেডি বিক্রি শুরু হয়ে গেছে গ্রামশহরের বিভিন্ন জায়গায়। আর ল্যাপতোষক তৈরীর কজে ধুমছে চলছে ওইসব ব্যবসায়ীদের।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের ভ্যানচালক মনিরুল মুন্সী বলেন, বিকেলের পর থেকে শীতের যে আমেজ তা পাওয়া যাচ্ছে। শীতের পোশাক না পরলে ভ্যান চালানো যাচ্ছে না। সকালে শীত থাকার কারণে একটু কষ্ট হচ্ছে। সকাল ও সন্ধ্যায় হাতপা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আবার হিমেল বাতাস গায়ে লাগছে। ফলে শীত ভালোই পড়া শুরু হয়ে গেছে।

পথচারি মতিয়ার রহমান বলেন, সকালে আজ খুব শীত পড়েছে। শহরের হাঁটছি চাঁদর গায়ে দিয়ে। আবার ঠান্ডা বাতাস গায়ে এসে হিম শীতল করে তুলছে।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, এ মৌসুমে আজ মঙ্গলবার (19 নভেম্বর) সারাদিন জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেশ কদিন ধরে তাপমাত্রা নিচের দিকে নামছে। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। ফলে শীতের অনুভূতি আরও বাড়তে পারে।