চুয়াডাঙ্গায় কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই সমাপ্তি; সরকারের বিশাল লোকসান
দেশের একটি ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু চিনিকল। কিন্তু বেশিরভাগ বছরই চিনিখাতে বিশাল অঙ্কের টাকা লোকসান গুণতে হয় মিলটিকে। প্রধান কারণ হিসেবে কাঁচামাল সঙ্কট হওয়ায় চিনি উৎপাদনে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় সরকারকে।
এদিকে, দীর্ঘমেয়াদী সময়ে জমিতে বছরে একবার আখ চাষ হওয়ায় যেমন সময় নষ্ট হয় তেমনী চাষীদের জীবনযাত্রায় দারুণভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
আর এজন্য হাজার হাজার একর জমিতে বছরে তিনবার ধান, পাট ও ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়ায় আখ চাষ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে চাষীরা। ফলে চিনির বাজারে বেশির ভাগ সময়ই দেখা দেয় সঙ্কট। এতে করে ভোক্তাপর্যায়ে শুরু হয় অস্থিরতা।
অপরদিকে চাষীদের অভিযোগ, জমি লীজ নিয়ে দুর্নীতি রয়েছে। কেরুর সমস্ত জমি চাষীদের মধ্যে লীজ দেয়া হয়না। যদি কেরুর সমস্ত জমি চাষীদের মাঝে দেয়া হতো তাহলে চিনির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হত। কিন্তু তা না করায় চিনির চাহিদার তুলনায় উৎপাদন না হওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু কোং বাংলাদেশ লিমিটেডকে।
এতে করে বিশাল অঙ্কের টাকার লোকসান গুণতে হচ্ছে সরকারকে। জমি সঠিক চাষীদের মাঝে লীজের জটিলতা থাকায় বেশির ভাগ সময়ই লোকসানের বেড়াজালে বারবার আটকে যাচ্ছে সরকার। দেশ ও জাতির স্বার্থে এদিকে জোর তৎপর হয়ে লক্ষ্য রাখাই হবে সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে কেরু কর্তৃপক্ষরাও কাঁচামাল সঙ্কটের কথা স্বীকার করছে। বলছেন চাষীদের আখ চাষে ফিরিয়ে আনার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তারই অংশ হিসেবে গত ২০২১-২২ অর্থ বছরেও দর্শনা কেরু কোম্পানী বাংলাদেশ লিমিটেড চিনি উৎপাদনে ৭০ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। কেরু কর্তৃপক্ষের সঠিকভাবে সঠিক নিয়মে দায়িত্ব পালন না করার কারণেই এবারও ৫৩ দিনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও মাত্র ৪২ দিনেই শেষ হয়েছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ২০২২-২৩ মৌসুমের আখ মাড়াই। ফলে এবারও অন্তত ৫০ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে কেরুকে।
তবে ইতিহাসের সর্বনিম্ন রেকর্ড মাড়াইয়ের মধ্যদিয়ে শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) আখেরি হুইসেল বাজিয়ে সমাপ্ত করা হয় মাড়াই কার্যক্রম।
চলতি ২০২২-২০২৩ সালে ৫৩ দিন ৬২ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৮৮৪ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়। তাতে চিনি আহরণের হার ধরা হয় ৭ শতাংশ।
এদিকে, চলতি আখ মাড়াই মৌসুমে ৪ হাজার ২৩০ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মিলের কৃষি খামারগুলোর ১ হাজার ৫০ একর জমিতে আখ হয়।
তবে ২০২২-২০২৩ চলতি মাড়াই মৌসুমে ৫৩ দিনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও মাত্র ৪২ দিনেই কেরু চিনিকলের মাড়াই মৌসুম শেষ হয়ে গেল। এ ৪২ দিনে মাত্র ৪৬ হাজার ৬০ মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ে ২ হাজার ২১৯ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন হবে বলে জানায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ। যা ৫ দশমিক ০৫ পয়েন্টে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে প্রতিষ্ঠানটির।
তবে এ বছরও প্রতিষ্ঠানটি চিনি খাতে ৫০-৫৫ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে জানান কেরু’র মহা-ব্যবস্থাপক (অর্থ) মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন