চুয়াডাঙ্গায় ‘জীনের মসজিদে’ হাজারো ভক্তবৃন্দ

চুয়াডাঙ্গায় গায়েবী গম্বুজযুক্ত ঐতিহ্যবাহী ঠ্কুরপুর পীরগঞ্জ মসজিদে শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) শনিবার বার্ষিক ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকিরের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রতিবছরের বাংলা মাসের ১২ ফাল্গুন এ ওরসশরিফের আয়োজন করে পীরগঞ্জ মসজিদ অবস্থিত ঠাকুরপুর গ্রামবাসী।
এক রাতে হওয়া এই গম্বুজযুক্ত মসজিদকে স্মরণ করে আল্লাহপাকের রহমত বর্ষিত হয়। এমন বিশ্বাস রেখে চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ আশপাশ জেলাসহ এমনকি সুদূর ঢাকা থেকেও অনেক মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে থাকে বিভিন্ন ধরনের মান্নত করে থাকে। তেমনী প্রতিদিনই অনেক মানুষ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে নিজের সমস্যা মনে মনে উল্লেখ করে মান্নত করে। এছাড়াও আল্লাহপাকের বিশ্বাস অর্জন করে মান্নত করে ফলাফল পাওয়ার গুঞ্জন রয়েছে এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন জেলার মানুষের।

এ মসজিদটি কবে কিভাবে তৈরী হয়েছে কেউই নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও খাতা-কলম অনুযায়ী এবছর ৯৬তম ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকির অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এলাকার খুনখুনে মুরুব্বিদের ভাষ্য অনুযায়ী প্রায় ৩শ’ বছরেরও বেশি সময় আগেও নির্মিত হয়েছে বড় গম্বুজযুক্ত এ মসজিদদটি। সেই থেকেই প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয় ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকির।

মসজিদ ঠাকুরপুর গ্রামে অবস্থিত হলেও পরবর্তীতে স্থানীয়রাই পরিবর্তন করে স্থানটি বর্তমানে পীরগঞ্জ মসজিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ঠাকুরপুর গ্রাম হলেও বিশাল আকৃতির গম্বুজ মসজিদটি পীরগঞ্জ নামকরণের কারণ স্থানীয় প্রবীণদের মুখে মুখে। সে হিসেবে যুগে যুগে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সাধক ইসলামধর্ম প্রচার করে বেড়াতেন। তাদেরই অংশ হিসেবে হযরত আফু শাহ্ ছিলেন একজন সাধক ব্যক্তি। সঠিকভাবে বলা না গেলেও ১৬৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাথাভাঙ্গা, নবগঙ্গা বেয়ে সেসময় মালপত্র নিয়ে ঠাকুরপুরে আস্তানা গড়ে তোলেন তিনি। অবস্থান করার পর হযরত আফু শাহ জীনের সাহায্যে এক রাতেই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে ‘জীনের মসজিদ’ হিসেবেও বিশেষভাবে অভিহিত রয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এ গায়েবী মসজিদটি। চারপাশে পুকুর নারিকেল গাছসহ রয়েছে কবরস্থানও।

সেই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঠাকুরপুর গ্রাম হলেও বর্তমানে মসজিদটির নাম পীরগঞ্জ হিসেবে প্রচলিত।

সময়ের পরিবর্তে এ মসজিদের মূল অবকাঠামো ঠিক রেখেই মসজিদের বাইরে ভেতরে কমিটির সহায়তায় টাইলস বসিয়ে আস্তে আস্তে আধুনিকতায়নে রুপ নিয়েছে মসজিদটি। তৈরি করা হয়েছে ২য় তলা ভবন। ধর্মীয় অনুসারে বর্তমান কমিটি ঠাকুরপুরের নাম থেকে পীরগঞ্জ মসজিদটিতে আরও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য একই আদলে বিশাল আকৃতির আরও একটি গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে।

বিশাল আয়োজনের মধ্যদিয়েই প্রতি বছরের ন্যায় এবছরেও আয়োজন করা হয়েছে ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকিরের। এ আয়োজনকে ঘিরে বিশাল এলাকাজুড়ে বসে বিভিন্ন ধরনের দোকান পাট। এক কথায় সাময়িক মেলা বসে এখানে। গায়েবী মসজিদকে বিশ্বাস করে জেলা ছাড়াও দূর দূরন্তের নারী-পুরুষ মান্নতের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে তেল পড়া পানি পড়াসহ বিভিন্ন উপায়ে উপকার পেয়ে থাকে। উপকারভোগী ও ভক্তবৃন্দের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এদিনে। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষের জন্য রান্না করা হয় ডেস্কি ডেস্কি খিচুরী। আজকের এই দিনে বেশিরভাগ স্থানীয়রা বাড়িতে রান্নাবান্নাও বন্ধ করে ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকিরে অংশগ্রহণ করে থাকে। সারাদিন অনুষ্ঠান স্থলের এত মানুষের সমাগম ঘটে যা দেখে আশ্চর্য মনে হবে।

এ মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকার হয়রত মাওলানা মুফতী মো. আল আমীন সাইফী। দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা কালিয়াবকরী মাদ্রাসার মোহতামিম হযরত মাওলানা মুফতী আলী আকবর, বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন পীরগঞ্জ জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ।