ছোট বিক্ষোভ থেকে যেভাবে জাতীয় সঙ্কট পাকিস্তানে
মাত্র তিন সপ্তাহ আগে ইসলামাবাদে শুরু হওয়া সাধারণ এক বিক্ষোভ পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্কটে রূপ নিয়েছে। শনিবার বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার সময় পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির বেসামরিক সরকার।
পাকিস্তানের চলমান এই সঙ্কটের কয়েকটি প্রশ্ন ও তার জবাব:-
কারা প্রতিবাদ করছেন?
গত ৬ নভেম্বর ইসলামাবাদে তেহরিক-ই-লাবাইক ইয়া রাসুল আল্লাহ (টিএলওয়াই) নামের একটি সংগঠনের প্রায় দুই হাজার সদস্য বিক্ষোভ শুরু করে। কট্টরপন্থী ছোট এই গোষ্ঠী জ্বালাও-পোড়াওয়ের জন্য দেশটিতে বেশ পরিচিত। খাদিম হুসাইন রিজভি নামে এক সাধক এই গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে উপহাসমূলক বক্তৃতা, বিবৃতির জন্য তিনি প্রায়ই দেশটিতে হাসির খোরাকে পরিণত হন।
সুফিবাদের সঙ্গে বারেলভি সম্প্রদায়ের এই সংগঠনের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্প্রদায়ের লোকজন আধুনিক ইসলামের অনুস্মরণ করে। ২০১৬ সালে বারেলভি মতবাদের অনুসারী মুমতাজ কাদরির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর এই গোষ্ঠীটি কঠোর অবস্থানে চলে যায়। ব্লাসফেমি আইন নিয়ে বিতর্কিত অবস্থানের কারণে পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর সালমান তাসিরকে হত্যার দায়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
কী চায় তারা?
নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের শপথ নেয়ার বিধানে সরকার সংশোধন আনার পর বিক্ষোভ শুরু করে টিএলওয়াই। সংশোধনী ছোট ছিল, সরকার বলছে সামান্য ভুলেই এটি হয়েছে। তবে পরিস্থিতি দ্রুতই উল্টো দিকে মোড় নেয়।
প্রতিবাদকারীরা এই বিষয়টিকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ব্ল্যাসফেমির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলে। রক্ষণশীল পাকিস্তানে প্রায়ই এই ইস্যুতে ব্যাপক প্রাণঘাতী সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
সংশোধনী আনার জেরে দেশটির আইন মন্ত্রী জাহিদ হামিদের পদত্যাগ দাবি করে তারা। শনিবার বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর টিএলওয়াই’র নেতারা হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর মর্যাদা রক্ষার জন্য সব পাকিস্তানে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। টিএলওয়াই’র ফেসবুক পেইজে দেয়া বিবৃতি অনুযায়ী, তারা পাকিস্তানে শরিয়াহ আইন চায়। একই সঙ্গে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে তারা। গত সেপ্টেম্বরে লাহোরের উপ-নির্বাচনে লড়াই করেছে এই সংগঠনটি।
যেভাবে সহিংসতার শুরু
দিনের পর দিন বিক্ষোভকারী রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ করতে থাকে। এর ফলে ঘণ্টার ঘণ্টা ধরে কমিউটার ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহনে আটকে পড়া লোকজন হতাশ হতে থাকে। দেশটির আদালত টিএলওয়াই’র এই বিক্ষোভকে অবৈধ বলে ঘোষণা দেন। তবে সংখ্যায় অল্প এই গোষ্ঠীকে কারা সমর্থন দিচ্ছে তা নিয়েও ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজছে অনেকেই।
বিক্ষোভ শুরুর তিন সপ্তাহ পর শনিবার পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনী, সীমান্তরক্ষীবাহিনী ও নিরাপত্তাবাহিনীর প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কর্মকর্তা প্রতিবাদকারীদের হটিয়ে দিতে অভিযান শুরু করে। এতে ছয়জন নিহত ও আরো আড়াই শতাধিক আহত হয়েছে।
সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?
বিক্ষোভ শুরুর পর থেকেই দেশটির সরকার শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানে জোর দেয়। ২০১৮ সালে দেশটির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সরকারের নজর এখন সেই নির্বাচনের দিকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বেসামরিক সরকারের কঠোর অবস্থানে না যাওয়ার নজির আছে। দমন অভিযানের কারণে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর পাল্টা প্রতিক্রিয়ার শঙ্কায় সরকার এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে।
ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের বিশ্লেষক মাইকেল কুজেলম্যান বলেন, এই প্রতিবাদের সফলতা ছিল ভয়াবহ বিরক্তিকর।
পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডন বলছে, রোববার দেশটির শীর্ষ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা জরুরি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ইসলামাবাদের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ না করার সিদ্ধান্তে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন। এর পরিবর্তে রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানে জোর দিয়েছেন তারা।
সূত্র : এএফপি, ডন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন