জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেও নিজের ভালোবাসাকে ভুলে যাননি তাসকিন

হাজারো নারী ভক্তকে কাঁদিয়ে দীর্ঘদিনের বান্ধবী সৈয়দ রাবেয়া নাঈমার সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ।

জাতীয় খেলার আগে থেকে একে অপরকে চিনতে তারা। একই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন তারা। সাত বছরে ধরে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব। দুজনের বাসাই মোহাম্মদপুরে। এক বছর আগে ঘরোয়াভাবে তাসকিন-নাঈমার আংটি বদল হয়।

তবে, সাত বছর আগের সেই তাসকিন ও এখনকার তাসকিনের মধ্য আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে। বাংলাদেশসহ সারা ক্রিকেট বিশ্ব এখন তাকে চেনে। দেশের হাজারো নারী টাইগার ভক্তদের প্রথম ক্রাস ছিলেন এই তাসকিন। কিন্তু তাসকিন এই জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিজেকে হারিয়ে দেননি। তিনি নিজের জীবনটা ঠিকই বান্ধবী নাঈমাকে দিয়ে রেখেছিলেন।

তাসকিন তুমি কার? গতবছর এমন প্রশ্নে সরব ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সাধারণ মেয়ে ভক্ত থেকে শুরু করে সেলিব্রেটি মডেল-অভিনেত্রীরা পর্যন্ত ছিলেন সেই তালিকায়। কিন্তু অবশেষে সাউথ আফ্রিকা সিরিজের পর দেশে ফিরেই তাসকিন ঘোষণা দিলেন তিনি সৈয়দ রাবেয়া নাঈমার, অন্য কারও নন।

মঙ্গলবার রাতে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। তাসকিনের দুলাভাই তানভীর খান উজ্জ্বল বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তাসকিনের স্ত্রী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি)’এ অর্থনীতিতে স্নাতক করছেন। তাসকিন নিজেও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাইয়েদা রায়েবা নাঈমা’র সঙ্গে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। লালমাটিয়ায় তাসকিনের স্ত্রী রাবেয়ার পৈতৃক বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

বছর খানেক আগেই ঘরোয়া ভাবে গোপনে তাসকিন-রাবেয়ার আংটি বদল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবরের শেষ দিনে নতুন ইনিংসে পা দিলেন তাসকিন।

স্ত্রী নাঈমা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) অর্থনীতিতে স্নাতক বিভাগের শিক্ষার্থী। তাসকিন নিজেও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

মাত্র শেষ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে মঙ্গলবার সকালেই দেশে ফেরেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেসার তাসকিন আহমেদ। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দুই টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে আর দুইটি টি-টোয়েন্টি মাচের পূর্ণাঙ্গ সিরিজে একটি টেস্ট ছাড়া বাকি সব ম্যাচেই মূল একাদশে ছিলেন তাসকিন। যদিও বল হাতে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি।

২০১৪ সালের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেক হয় তাসকিনের। একই বছর জুনে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলতে নামেন। এরপর টেস্টের জার্সি গায়ে চাপাতে চাপাতে তিন বছর কেটে যায়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ওয়েলিংটনে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলেন।

এক নজরে ফিরে দেখা তাসকিনের ক্যারিয়ার:

অক্টোবর, ২০১১ সালে ঢাকা মেট্রোপলিশের হয়ে বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে তাসকিনের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ব্যক্তিগত দ্বিতীয় টুয়েন্টি২০ খেলায় চিটাগং কিংসের হয়ে অংশগ্রহণ করে দূরন্ত রাজশাহীর বিপক্ষে ৩১ রানে ৪ উইকেট লাভ করেন ও ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন। নিয়মিতভাবে ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে বোলিংয়ে পারদর্শী তিনি।

১ এপ্রিল, ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতার সুপার টেন পর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে অভিষেক ঘটে তার। ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে তার ওয়ানডে অভিষেক হয়। খেলায় তিনি ৫ উইকেট লাভ করেন। একমাত্র বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে তিনি অভিষেক ওয়ানডেতে ৫ উইকেট নেন।

২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ৪ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে বিসিবি বাংলাদেশ দলের ১৫-সদস্যের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে তিনিও দলের অন্যতম সদস্য মনোনীত হন। ৫ মার্চ, ২০১৫ তারিখে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ৪র্থ খেলায় তিনি ৪৩ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট দখল করেন। ঐ খেলায় বাংলাদেশ দল বিশাল রান তাড়া করে ৬ উইকেটের কৃতিত্বপূর্ণ জয়লাভ করে।

বোলিং অ্যাকশন বিতর্কঃ বোলিং অ্যাকশন ‘ত্রুটিযুক্ত’ হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হন তাসকিন। ১৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে আইসিসি কর্তৃপক্ষ আরাফাত সানি ও তাসকিনের বোলিং অবৈধ বলে তাদের ওয়েবসাইটে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে তাদের দু’জনেরই কনুই ১৫ ডিগ্রির বেশি বেঁকে যায় বলে জানায়।

বিশ্বকাপ-টি২০ চলাকালীন তার জায়গায় বাংলাদেশ দলে স্থান পান শুভাগত হোম। তাসকিনের বোলিং অবৈধ ঘোষনায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সমালোচনায় রূপান্তরিত হয়। এ নিয়ে সরব প্রতিবাদ করেছেন সাবেক ক্রিকেটাররাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রীড়ামোদীরা আইসিসির এ সিদ্ধান্ত ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন। তাসকিনের বোলিং পরীক্ষা নিয়েও গণমাধ্যমে নানা সন্দেহ প্রকাশিত হয়েছে।