জলজট আরও হবে, হুঁশিয়ারি ওয়াসা এমডির
আগে পাঁচ-সাত বছর অন্তর অন্তর টানা বৃষ্টিতে রাজধানীতে বড় ধরনের জলজট তৈরি হতো। কিন্তু এখন জলবায়ুর পরিবর্তন, শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও খালের পানি প্রবাহের বাধার কারণে প্রতি বছরই বড় ধরনের জলজট সৃষ্টি হতে পারে বলে আগাম হুঁশিয়ারি দিলেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসার প্রধান এ কথা বলেন।
রাজধানীতে পানি নিষ্কালষে যে কয়টি সরকারি সংস্থা কাজ করে প্রতিষ্ঠান কাজ করে, তার একটি ঢাকা ওয়াসা। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর একটি বড় অংশ ডুবে থাকার প্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন তাকসিম।
তাহলে জলাবদ্ধতা থেকে কি কখন্ও মুক্তি পাওয়া যাবে না?- জানতে চাইলে ওয়াসা প্রধান খান বলেন, ‘বর্ষার মৌসুমে রাজধানী জুড়ে চলমান জলজট নিয়ন্তনে ‘মাস্টারপ্ল্যান’ (মহাপরিকল্পনা) তৈরি করেছি। এই পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করা হলে ২০২৫ সালের মধ্যেই ঢাকা শহর শতভাগ সুয়ারেজ লাইনের আওতায় আসবে। আর তা হলে, যত বড় ধরনেরই বৃষ্টিপাত হোক না কেন, দেড় ঘণ্টার মধ্যে আমরা পানি নিষ্কাশন করতে পারব।’
রাজধানীর নিষ্কাষণ নিয়ে কাজ করে সোট চারটি সংস্থা। এর মধ্যে ওয়াসা ছাড়াও আছে সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই চারটি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন নগরবিদরা।
ওয়াসা মহাপরিচালকও বলেন, ‘এই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য যে কোন একটি হাতে করতে হবে।’ এই একটি ‘হাত’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন হতে পারে, দক্ষিণও তার সাথে আসতে পারে বলেও জানান তিনি।
বুধবারের জলজট নিয়ে তাকসিম খান বলেন, ‘ঢাকা শহরের চারপাশের নদীসমূহের পানির লেভেল বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা পাম্পিং স্টেশনের স্লুইস গেট বন্ধ করে চারটি স্থায়ী ও ১৪ টি অস্থায়ী পাম্পিং স্টেশন চালু রাখা হয়। ফলে বৃষ্টির পানির চাপ বেশি থাকার কারণে এরকম জলজট সৃষ্টি হয়ে।’
ওয়াসার প্রধান বলেন, ‘আমাদের স্বাভাবিক বৃষ্টির জলজট নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তুতি আছে। যদি না থাকত এতে দিন যে পানি জমেছে তা নামত না।’
‘গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কথা যদি বলেন, এখানে অস্বভাবিক ভাবে বৃষ্টি হওয়াতে কিছু সময়ের জন্য জলজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে তিন ঘন্টার মধ্যে সেই পানি কমিয়ে আনতে পেরেছি।’
২৬ খালের মধ্যে অস্তিত্বহীন ১৩টি
সংবাদ সম্মেলনে পানি নিষ্কাষণে ঢাকার খাল নিয়েও কথা বলেন ওয়াসা এমডি। তিনি জানান, কাগজে-কলমে রাজধানীতে ২৬টি খাল থাকলেও এর মধ্যে ১৩টির কোনো অস্তিত্বই নেই। এগুলো দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
ওয়াসা এমডি বলেন, ‘প্রত্যেকটা খাল সরকারি খাস জমি ও এর মালিক জেলা প্রশাসন (ডিসি)। তারা আমাদেরকে ২৬ টা খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে। যার মধ্যে ১৩ টা খালের পাড় বাঁধাইসহ বিভিন্ন উন্নয়ন করেছি, কিন্তু বাকি ১৩ টা খাল এক সময়ে নিচু জমি ছিল, যার ওপর দিয়ে পানি বইত। একটা সময় পর মানুষ এটাকে নিজের দাবি করে বাড়ি করে। আমরা খালগুলোতে গিয়ে দেখি কোন কোন অংশে খালের চিহ্ন নেই। (সিএস/আর এস) দাগেও খালের কোন চিহ্ন নেই।’
নতুন করে শিগগির পাঁচটি খালের জন্য জায়গা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান ওয়াসা এমডি।
রাজধানীর খালগুলোতে পানির প্রবাহ কম থাকার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ওয়াসাকে দায়ী করার বিষয়ে জানতে চাইলে তাকসিম বলেন, ‘এটা কোন ভাবেই আমি সমর্থন করব না। কারণ খাল পরিষ্কার করার দায়িত্ব আমাদের, এবং আমরা খালের ওপরের অংশের ময়লা পরিষ্কার করি। তবে খাল খনন করার মতো পর্যাপ্ত জিনিস আমাদের নেই। কিন্তু আমরা খাল খনন করে আসার পর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সলিড ওয়েস্টে খাল ভরে যাচ্ছে। এই সলিড ওয়েস্ট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশেনের। এগুলোই পানিতে পরে পানির প্রবাহ কমিয়ে দিচ্ছে।’
‘আর যদি বলেন, ড্রেনেজ সিস্টেম শুধু আমাদেরই দায়িত্ব, তাহলে বলব সিটি করপোরেশন কীভাবে পাঁচশ কোটি টাকার মতো ড্রেন নির্মাণের কাজ করেছে? এটা আমার প্রশ্ন’-এই বলে শেষ করেন ওয়াসা এমডি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন