‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে আমাকে জড়িয়ে কেঁদেছিলেন শাম্মী আপা’
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সিনেমার জন্য প্রায় তিন শতাধিক গান গেয়েছেন সদ্য প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী শাম্মী আক্তার। সেই তালিকায় অসংখ্য গান রয়েছে যা কালজয়ী হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে এই শিল্পী ভূষিত হয়েছিলেন মাত্র একবার। শিল্পীর এ স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল রোমান্টিক সিনেমার নির্মাতা হিসেবে পরিচিত জাকির হোসেন রাজুর হাত ধরে।
২০১০ সালে রাজু নির্মাণ করেছিলেন ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ শিরোনামের ছবি। এখানে ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ গানটি গেয়ে প্রথম ও শেষবারের মতো শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন শাম্মী আক্তার। পুরস্কার হাতে নিয়ে আনন্দ আর আবেগে সেদিন জাকির হোসেন রাজুকে জড়িয়ে কেঁদেছিলেন এ শিল্পী। নিজের ভাই বলে বুকে টেনে নিয়েছিলেন রাজুকে।
মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে শাম্মী আক্তার আর নেই খবরটি দিতেই ওপাশে ভেজা গলার আওয়াজ শোনা গেল জাকির হোসেন রাজুর। তিনি বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণ আগেই খবরটি শুনলাম শাম্মী আপা আর নেই। মনটা খারাপ হয়ে গেল। নিভৃতচারী গুণী মানুষ ছিলেন শাম্মী আপা। গান গাওয়াটাকেই জীবনের ধ্যান ও জ্ঞান হিসেবে নিয়েছিলেন তিনি। প্রচার, চাকচিক্য কোনোদিন মনে হয় তাকে টানেনি। অন্তত আমি তাকে যেভাবে দেখেছি খুবই সাধারণ মানুষ হিসেবেই তিনি ধরা দিয়েছেন। যা তার প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল করেছে আমাকে। তিনি সারা দেশের শ্রোতাদের কাছেই অনেক শ্রদ্ধার মানুষ ও শিল্পী। আমি তার গায়কীর ভক্ত ছিলাম। ভাগ্যক্রমে একটি কাজ করার সুযোগ আমি পেয়েছিলাম। সেই সুযোগ আমাকে অনেক স্মৃতি উপহার দিয়েছে।’
আবেগাক্রান্ত কণ্ঠে এ নির্মাতা শোনালেন শাম্মী আক্তারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের গল্প। তিনি বলেন, ‘আমি যখন ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ সিনেমাটি বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তখনই পরিকল্পনা করেছিলাম শাম্মী আপার বহুল জনপ্রিয় গানটি আমি সিনেমাতে ব্যবহার করবো। এ গানটি তিনি গেয়ছিলেন আশির দশকের দিকে। খুব জনপ্রিয় ছিলো। আমার ছবির টাইটেল ট্র্যাক হিসেবেই এ গানটি নতুন করে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেই আমি। এবং আমি চেয়েছিলাম গানের মূল শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালকদের দিয়েই গানটি করাবো।
সেই লক্ষেই গানটির সুর ও সংগীতকার শ্রদ্ধেয় শেখ সাদী খানের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি রাজি হলেন। নতুন করে তৈরি হলো গানটির মিউজিক। মনিরুজ্জামান মনির ছিলেন গানটির গীতিকার। সব রেডি করে শাম্মী আপাকে নিয়ে আসা হলো গানের কণ্ঠ দেয়ার জন্য। তিনি স্টুডিওতে ঢুকে অস্বস্তিবোধ করছিলেন। আমাদের সঙ্গে তার পরিচিতি বা সখ্যতা ছিলো না। জেনারেশনের গ্যাপ ছিলো। সেজন্যই তিনি আনইজি ফিল করছিলেন। শেখ সাদী সাহেব উনাকে ইজি করার চেষ্টা করলেন। সেদিন আর গানের রেকর্ড হয়নি।
আমরা আবারও স্টুডিও ভাড়া নিলাম। তিনি নিজের মতো করে গানটি যেন গাইতে পারেন সেজন্য তাকে নিয়ে আড্ডা দিলাম। বললাম, যতোদিন সময় লাগে লাগুক। এ গান আপনাকেই গাইতে হবে। অবশেষে তিনিই গানটি গাইলেন। আমি শান্তি পেলাম।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার স্মৃতিচারণ করে জাকির হোসেন রাজু বলেন, ‘আমার ছবিতে এ গান গেয়ে প্রথমবারের মতো শাম্মী আপা জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। পুরস্কার পেয়ে আমাকে জড়িয়ে কেঁদেছিলেন তিন। যারা শাম্মী আপাকে চেনেন তারা নিশ্চয়ই জানেন তিনি কাউকে ভাই বললে ‘ভাইডি’ বলে ডাকতেন। শাম্মী আপা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন- ‘তুমি আমার ভাইডি। তোমার জন্য আজ আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলাম। আমার অনেকদিনের আক্ষেপ তোমার হাত ধরেই মিটে গেল।’ তার এইসব কথা শুনে আমারও চোখের পাতা ভিজে উঠেছিল। নিজের ভেতর অন্য রকম একটা ভালো লাগা অনুভব করলাম।’
জাকির হোসেন রাজু শাম্মী আক্তারকে চলচ্চিত্রের মানুষ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘সবাই তাকে সংগীতশিল্পী হিসেবে গানের মানুষ বলেন। আমি তাকে একজন চলচ্চিত্রশিল্পী হিসেবেই সম্মান করবো আজীবন। তিনি চলচ্চিত্র ভালোবাসতেন। চলচ্চিত্রের সেন্সর বোর্ডের একজন সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। অনেকদিন কষ্ট করেছেন শেষ জীবনে। আল্লাহ আমাদের অদেখা পৃথিবীতে শাম্মী আপাকে ভালো রাখুন। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইলো আমার।’
প্রসঙ্গত, ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নির্ভর ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও রুমানা। শাম্মী আক্তারের গাওয়া গানটির সঙ্গে পর্দায় ঠোঁট মিলিয়েছেন রুমানা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন