‘জাপা-হেফাজতের সঙ্গে বাস্তবতার প্রয়োজনে সমঝোতা’

নির্বাচনে জেতা আর বাস্তবতার প্রয়োজনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সমঝোতা বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, এ জন্য কেউ ভুল বুঝতে পারেন কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে কমপ্রোমাইজ করা হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ২৬ বছর পুর্তিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই বলেও মন্তব্য করেন। তার দাবি, বিএনপি নিজে সংলাপের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

এ সময় তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপের আহ্বান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আচরণে ভেস্তে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন।

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে সান্ত্বনা জানাতে প্রধানমন্ত্রীর গুলশানে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একজন শোককাতর মাকে সান্ত্বনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বেগম জিয়ার বাড়িতে গিয়েছিলেন তখন মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে সংলাপের দরজা বন্ধ করেছেন।’

বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘একটু সুযোগ ছিল, কিন্তু সেদিন এ দেশের সংলাপের পরিবেশটাই নষ্ট করলেন। এখন নির্বাচন কমিশন আছেন, কুমিল্লায় যে রকম জয় পেয়েছেন, যদি যোগ্য নেতা দিতে পারেন তবে সামনের নির্বাচনেও জিতবেন।’

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন। ওই নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ করে বিএনপির দাবি করেছিল, তা না হলে নির্বাচনে তারা আরো বেশি ভোট পেত।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা মেনে নিয়েছি যে কুমিল্লায় তারা যোগ্য দল হিসেবে জয়লাভ করেছে। আমরা বরাবরই এখানে জিততে পারি না, যেমনটা রংপুরে সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যোগ্য দল হিসেবে জয়ী হয়েছে। তবে কুমিল্লায় আমরা কিছুটা উন্নতি করতে পেরেছি। নারায়ণগঞ্জে আমরা জিতেছি।’

একটু স্বার্থে লাগলেই বিএনপি একটা মন্তব্য করবেই- এ কথা বলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘যারে দেখতে নারী তার চলন বাঁকা। জাতীয় সংসদে ৩৩০ আসনেই যেন তাদের দিয়ে দিতে হবে। তা না হলে নির্বাচন কমিশনকে তারা কোনো দিনও ভালো বলবে না।’

বিএনপির কিছু নেতা প্যাথোলজিকাল লায়ার বলে মন্তব্য করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘ওই নেতারা কোনো মিটিংয়ে যান না। ঘরে বসে শুধু মিথ্যাচারের ভাঙা রেকর্ড বাজান। আবার ফখরুল সাহেব যদি একটু নমনীয় ভাষায় কথা বলেন, তাহলে তাকে সরকারের দালাল আখ্যা দেয়া হয়। তাদের নিজেদের মধ্যেই তো ঠিক নেই।’ বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে ২০০১ সালের চেয়েও বিভীষিকাময় হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এরশাদের জাতীয় পার্টি, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের জোট ও সমঝোতার প্রসঙ্গে কারও কারও বক্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে জেতা আর বাস্তবতার প্রয়োজনে জোট করতে হয়। আপনারা আমাদের ভুল বুঝতে পারেন, কিন্তু এখানে বাস্তবতার সাথে কমপ্রোমাইজ করা হয়েছে। আমরা ক্ষমতায় যদি না আসতে পারি তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব কীভাবে।’

কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়াম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আমরা স্বৈরাচারী বলি। কিন্তু পাঁচ আসনে দাঁড়িয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেছেন তিনি। বাস্তবতাকে মেনে আমরা তাদের সাথে জোট করেছি। হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দল নয়। আমরা তাদের সাথে জোট করিনি। তাদের শিক্ষার সনদ দরকার, যেটা বাস্তবতা। আমরা সেই বাস্তবতাকে সমর্থন করেছি।’