জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, আঘাত পড়ছে মধ্যবিত্তের ওপর
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) জানিয়েছে, দেশে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে বর্তমানে এক-পঞ্চমাংশ জনগোষ্ঠী মধ্যবিত্ত এবং ২০৩০ সালে তা হবে এক-তৃতীয়াংশ।
তবে একই সঙ্গে বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। আর এ আঘাত এসে পড়ছে মধ্যবিত্তের ওপরই। অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, যারা দরিদ্র থেকে নিম্ন মধ্যবিত্তে উন্নীত হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে তারা গরিবই রয়ে গেছে। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত জানান, প্রবৃদ্ধি বাড়ার কারণে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়লেও তা সামাল দেওয়ার মতো অর্থনৈতিক নীতিমালা নেই।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ‘কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (ক্যাব) জানিয়েছে, ঢাকায় গত আট বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৭১ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন বছরে সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে ৮-এর কাছাকাছি চলে এসেছে। শুধু অর্থনীতিবিদ নন, খোদ মধ্যবিত্ত লোকজনই বলছেন, আঘাতটা এসে বেশি পড়ছে তাঁদেরই ওপর।
রাজধানীর একটি হোটেলে খাবার খাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘খাওয়াদাওয়া ভালো খেতাম, এখন একটু মিডিয়াম (মধ্যম মানের) খাই। এখানে ৫০ টাকায় হলেও আরো ভালো হোটেলে খেতে ১২০ টাকা লাগে। টাকা কুলায় না তাই আর অনেক কিছুই সম্ভব হয় না।’
রাজধানীর বাসে প্রচণ্ড ভিড়। প্রতিদিন ভিড় ঠেলে দাঁড়িয়ে থেকে গন্তব্যে যায় মানুষ। বাসের এক যাত্রী বলেন, ‘দুই বছর থেকে এখনকার জীবনমান আরো কমে গেছে। যারা মধ্যবিত্ত জীবনযাপন করত, তারা এখন নিম্নবিত্ত জীবনযাপন করছে।’
অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘যারা দরিদ্র থেকে নিম্ন মধ্যবিত্তে উন্নীত হলো, এরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গরিবই থেকে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের যে নব্য ধনিক শ্রেণি, এঁরা কিন্তু আন্তর্জাতিক মানেরই ধনী। কাজেই এইটা থেকে বোঝা যায় যে, বৈষম্য একটি বিরাট সমস্যা।’
অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে এই লোকগুলো বেতনভোগী কর্মসংস্থানে না গিয়ে বরং আত্মকর্মসংস্থান করার চেষ্টা করছে। সেটা করে হয়তো তার সেই উত্তরণটা ঘটল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা যাচ্ছে, সরকার হয়তো একটি নতুন বেতন স্কিম ইমপ্লিমেন্ট (বাস্তবায়ন) করল। তার ফলে তখনই দেখা গেল বাড়িভাড়া বেড়ে গেল। এই যে লোকটা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে একটু নিজের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল করল; সে পরবর্তীকালে দেখল বাড়িভাড়া বাড়ার কারণে আরেক ধাপ নিচে নেমে গেল।’
বিআইডিএসের গবেষণা অনুযায়ী মধ্যবিত্তদের বেশির ভাগই বেসরকারি খাতের ব্যবসা কিংবা চাকরির সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের মধ্যেই উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
ড. জায়েদ বখত আরো বলেন, ‘অর্থনীতি প্রবৃত্তি বাড়ার সাথে সাথে যেটা হচ্ছে, সেটা হলো মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে যে এন্ট্রিটা (প্রবেশ), সেটা ত্বরান্বিত হচ্ছে। কিন্তু সেই সাথে সেটা সামাল দেওয়ার মতো অর্থনৈতিক নীতিমালা গড়ে উঠছে না। সোশ্যাল সাপোর্টটা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না আসে, তখন দেখা যাবে যে এই উত্তরণটাকে ধরে রাখা যাচ্ছে না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন